পুরোপুরি বন্ধ উত্তর গাজার হাসপাতালগুলো: স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

উত্তর গাজার হাসপাতালগুলো পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান।
আল-কুদরা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক গাজার উত্তরাঞ্চলের হাসপাতালগুলো দখলের হার ১৯০ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
আল-কুদরা বলেন, হাসপাতালটিতে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
আল-শিফা হাসপাতালের নিচে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের টানেল ও পরিচালনা কেন্দ্র থাকার অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে হাসপাতালটিকে ঘেরাও করে এর ভেতর অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও হামাস ইসরায়েলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্যমতে, গত সোমবার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে ২৮টি অপরিণত শিশুকে চিকিৎসার জন্য মিশরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
আল-কুদরা আরও জানান, প্রায় ১২০ জনকে উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হসপিটাল থেকে উপত্যকাটির দক্ষিণে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
হসপিটালটিতে এখনও ৪০০ জনের বেশি আহত রোগী রয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসকসহ ২০০ জনেরও বেশি চিকিৎসা প্রদানকারী কর্মী ও দুই হাজারেরও বেশি শরণার্থী আশ্রিত রয়েছে।
আল-কুদরা বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাসপাতালের ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের একটি 'মৃত্যুর বলয়ে' আটকে রেখেছে। হাসপাতালের ভেতরে বা আশে-পাশে কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলেই তাকে নিশানা করা হচ্ছে। হাসপাতালটি চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি ট্যাংক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত সোমবার জানিয়েছিল, জাকার্তার অর্থায়নে পরিচালিত হাসপাতালটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১২ জন ফিলিস্তিনি ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
একইদিন হু'র পক্ষ থেকে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ান হসপিটালে কেবল সাধারণ চিকিৎসা দিতে পারছেন চিকিৎসকরা। সেখানে গুরুতর আহতদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে।
আল-কুদরা বলেন, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি-আন্ডার সেক্রেটারির বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত তার ৫৬ জন স্বজন বাড়িটিতে এসে উঠেছিলেন।
মুখপাত্র জানান, উদ্ধারকর্মীরা ১৭ টি মরদেহ খুঁজে পেয়েছে। অন্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
জ্বালানির অভাব ও ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজা সিটির হাসপাতালগুলোর বিদ্যুৎ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেইসঙ্গে রয়েছে পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকটও।
হু বলছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৩৩৫টি আক্রমণের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ১৬৪টি এবং পশ্চিম তীরে ১৭১ টি হামলা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে টানা দেড় মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এ পর্যন্ত ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। যাদের মধ্যে শিশু পাঁচ হাজার ৬০০ এবং নারীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার।