মনোনয়নপত্র জমার দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ; আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই জোটের দৌড়ঝাঁপ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায়। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন দুই জোট এখনও শরীক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পারেনি। জোটের অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং বিভিন্ন আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীর উপস্থিতির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ইতিমধ্যে শরীক দলের জন্য কিছু আসন আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড় দিলেও দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত আসন সমঝোতা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। এছাড়া শরিকদের জন্য বরাদ্দ করা বেশ কিছু আসনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। দলটির হাইকমান্ড থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আগামী ২০ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটও। প্রথমে আটটি দল নিয়ে গঠিত এই জোটের মধ্যে ৩০০ আসনেই একটি সমঝোতা হয়েছিল। তবে গতকাল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি জোটে যোগ দেওয়ায় নতুন করে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবারই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এরপর শুরু হবে যাচাই-বাছাই, আপিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া। ২০ জানুয়ারি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক পাওয়ার পরদিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে, যা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২ হাজার ৭৮০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩১টি জমা পড়েছে। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারবে। কিন্তু রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে দলটির নেতারা অন্য দলে যোগ দিয়ে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বড় দুই জোট। ফলে আগামী দিনগুলোতেই বোঝা যাবে, জোটগুলো তাদের ঐক্য ধরে রাখতে পারবে—নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনি লড়াইয়ের সমীকরণই বদলে দেবে।
বিএনপির আসন ছাড় ও বিদ্রোহী প্রার্থী সংকট
বিএনপি এ পর্যন্ত ২৭২ জনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে, যার মধ্যে আবার কয়েকটি আসনে প্রার্থী বদলও করেছে। বাকি ২৮টি আসন শরীকদের জন্য রাখা হলেও এখন পর্যন্ত শরীকদের মাঝে মাত্র ১৭টি আসন বরাদ্দ দিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়েও বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত ও শরীক দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ এই অসন্তোষ সামাল দেওয়া এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দাবিতে ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছে বিএনপি। এসব দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। সেই সমঝোতার অংশ হিসেবে বিএনপি তাদের আন্দোলনের সঙ্গীদের জন্য এখন পর্যন্ত ১৭টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ৯ দলকে ১২ আসন ছাড় দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মিত্র হিসেবে বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি।
শরিকদের উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন— ঢাকা-১২ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও ভোলা-১ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। এ ছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে চারটি আসন ছাড় দিয়েছে বিএনপি।
পাশাপাশি শরিক দলগুলোর পাঁচজন শীর্ষ নেতা তাদের নিজ দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন এবং ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও শরিকদের জন্য বরাদ্দ করা আসনগুলোতে অনেক বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জামায়াত জোটের পরিসর বাড়ল, সমঝোতায় বিলম্ব
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরপরই শরীকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।
আসন সমঝোতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জামায়াত আমির বলেন, দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সারা দেশের ৩০০ আসনের জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। দুটি দল একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেছে।
তিনি আও বলেন, 'আমাদের আসন সমঝোতা প্রায় শেষ। সামান্য কিছু বিষয় বাকি রয়েছে। আমরা আশা করছি নমিনেশন ফাইল করার পরপরই আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সুন্দরভাবেই সমাধান করতে পারব। এ ব্যাপারে আমরা খুবই আস্থাশীল।'
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ গতকাল টিবিএসকে বলেন, 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩০০ আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দেবে। তবে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, একটি চমৎকার সমঝোতা তৈরি হবে।'
