‘আয়নাঘরে’ নির্যাতন: শেখ হাসিনাসহ ১২ সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ (১৮ ডিসেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১২ জন উচ্চপদস্থ বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-১।
মামলাটি মূলত নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর ডিজিএফআই-এর সদর দপ্তরে গুম ও পদ্ধতিগত নির্যাতনের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে দায়ের করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ নির্ধারণ করবেন যে এই বিচার কাজ শুরু হবে কি না। মামলার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো কুখ্যাত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি), যা "আয়নাঘর" নামে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে যে, তৎকালীন সরকারের সমালোচকদের সেখানে বছরের পর বছর গোপনে বন্দি করে রাখা হতো।
হাসিনা ও ১২ জনের বিরুদ্ধে গুমের মামলায় অভিযোগ গঠন ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আজ সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বর্তমানে হেফাজতে থাকা তিন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এই তিন অভিযুক্ত হলেন—সাবেক ডিজিএফআই পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সারোয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী।
প্রসিকিউশন এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জন পলাতক আসামির নাম উল্লেখ করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পলাতকদের মধ্যে ৫ জন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআই-এর মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন—লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
পলাতক আসামিদের তালিকায় থাকা অন্যান্য হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদ-উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহমেদ এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাকসুরুল হক।
আইসিটি চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এর আগে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন যে, তদন্তে রাষ্ট্রীয় মদদে অপহরণ ও নির্যাতনের একটি সুনির্দিষ্ট ধরন (প্যাটার্ন) খুঁজে পাওয়া গেছে।
প্রসিকিউশন ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে অন্তত ২৬ জন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক গুম করার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছে। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, এই কর্মকাণ্ডের কমান্ড বা নেতৃত্বের দায়ভার তৎকালীন প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় এবং এর গোয়েন্দা সংস্থার ওপর বর্তায়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর আগে আটক থাকা তিন সেনা কর্মকর্তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদন করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল যে, অপহরণ ও অবৈধভাবে আটকে রাখার অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। তবে প্রসিকিউশন এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছে যে, 'আয়নাঘর' মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়, যার জন্য পূর্ণ বিচার বিভাগীয় জবাবদিহিতা প্রয়োজন।
