সীমানা নিয়ে আদালতের রায় আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে: ইসি সচিব
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আদালতের রায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি বলেন, 'আসন নিয়ে আদালতের রায় আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। রায়ে এক অর্থে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে আছি।'
বুধবার দুপুরে (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, 'আপনি যদি বলেন, তাহলে এক অর্থে এটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে আছে। খর্ব আর প্রশ্নবিদ্ধ— এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। খর্ব মানে বাতিল, আর প্রশ্নবিদ্ধ মানে হচ্ছে চ্যালেঞ্জযোগ্য।'
প্রসঙ্গত, বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি আসন করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পৃথক দুইটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে সোমবার (১০ নভেম্বর) বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে ইসির শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা।
এরপরও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
ইসির এই আসন বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতা-কর্মীরা।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১, ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২ এবং কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ গঠন করা হয়েছে।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট নিয়ে; বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর ও কচুয়া; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল ও মোংলা এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জও শরণখোলা নিয়ে।
এর ফলে বাগেরহাটের সংসদীয় আসন চারটি ও গাজীপুর পাঁচটি আসন থাকবে বলে জানিয়েছে ইসি।
ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, 'মাননীয় আদালতের স্বাধীনতা বা তার অধিক্ষেত্র সম্পর্কে কোনো মন্তব্য নির্বাচন কমিশন থেকে করার সুযোগ নেই। আদালতের অর্ডার টা পাই। তারপরে দেখব যে এখানে কী করা হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।'
ইসি সচিব বলেন, 'আউট অব কান্ট্রি ভোটিং এবং দেশের ভেতরে পোস্টাল ব্যালট ভোটের বিষয়ে আপনারা জানেন, বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের জন্য আমরা এখন পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ১০ হাজার ৪১৪ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পেরেছি।'
তিনি বলেন, 'দেশের ভেতরে তিন শ্রেণির মানুষ পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন—সরকারি চাকরিজীবী যারা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন, নির্বাচনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা।'
তিনি আরও বলেন, 'এই উদ্দেশ্যে আমরা যে অ্যাপটি তৈরি করেছি, তা এখন গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন। অ্যাপল স্টোরের অনুমোদন এখনও মেলেনি, যদিও দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গেই আমরা শুরু করেছিলাম। আমরা আশা করছি—তফসিল ঘোষণার পরপরই যারা নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন, তারা নিবন্ধন শুরু করতে পারবেন।'
ইসি সচিব বলেন, 'এখানে একটি বিষয় আছে—রিটার্নিং অফিসাররা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার পরই আমরা পুরোপুরি নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করতে পারব। আশা করা যায় ১৬ বা ১৭ ডিসেম্বর থেকেই এই নিবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।'
তিনি বলেন, 'আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর। আর নির্বাচনের সরাসরি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হবে, কারণ তা নির্ভর করছে ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যানের ওপর।'
তিনি আরও বলেন, 'রিটার্নিং অফিসাররা দায়িত্ব বণ্টন চূড়ান্ত করলে প্রেসাইডিং, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিবন্ধনও শুরু হবে।'
