আরপিও সংশোধন: তদন্তের পাশাপাশি এবার সরাসরি শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা পেল নির্বাচনী কমিটি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বড় ধরনের সংশোধনী এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে নির্বাচনী অনিয়ম রোধে গঠিত 'ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি' এখন থেকে শুধু তদন্তই করবে না, সরাসরি বিচারিক ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারবে। নির্বাচনী অপরাধে তারা তাৎক্ষণিক শাস্তি বা দণ্ড দিতে পারবে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আরপিও'র এই সংশোধিত গেজেট জারি করা হয়েছে। নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কমিটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি অ্যান্ড এডজুডিকেশন কমিটি'।
নতুন সংযোজিত ধারা ৯১এএ অনুযায়ী, এই কমিটি আরপিও'র ৭৩, ৭৫, ৭৭ ও ৯১বি ধারার (৩) উপধারায় বর্ণিত অপরাধসমূহের সরাসরি বিচার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসরণ করে বিচার পরিচালনা করবেন।
এতদিন নির্বাচনী তদন্ত কমিটি কেবল অনিয়ম তদন্ত করে ইসির কাছে সুপারিশ বা প্রতিবেদন পাঠাত। ইসি সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিত কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো তাদের হাতে সরাসরি বিচারিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হলো যা নির্বাচনী অপরাধ দমনে দ্রুত ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে ইসি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাসুদ বলেন, 'আরপিও ও আচরণবিধি অনুযায়ী কেউ আইন ভঙ্গ করলে এই কমিটিই বিচার করতে পারবে। তফসিল ঘোষণার পর বা কয়েক দিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে এবং পুরো নির্বাচনী সময়জুড়ে কার্যক্রম চালাবে।'
এই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩০০ আসনে দায়িত্ব পালনে ৩০০ জন বিচারক চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম নাসির উদ্দীন। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই সহায়তা চান।
সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, 'ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে যাতে উনারা (বিচারিক হাকিম) ডেপ্লয় করেন আমাদের শিডিউল ঘোষণার সাথে সাথে এই কাজটা যাতে ত্বরান্বিত করেন, সেটা প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছি।'
সংশোধিত আরপিওতে পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে থানার ওসি এবং নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বিশেষ বাহিনী সবাই কমিটিকে সহায়তা করতে বাধ্য থাকবেন। যদি কোনো কর্মকর্তা সহায়তা না করেন বা অবহেলা করেন, তবে তা 'অদক্ষতা' বা 'অসদাচরণ' হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া সংশোধনীতে পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণের বিষয়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আদালতের রায়ে কোনো আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হলে ওই আসনের পোস্টাল ভোট গণনা করা হবে না বলে নতুন বিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
