যাত্রা শুরু করলো নিরাপদ দুধ উৎপাদন ও পুষ্টি সচেতনতায় গ্রিন ডেইরি প্রকল্পের ‘পুষ্টি কথা’
নিরাপদ দুধ উৎপাদন ও গ্রহণ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ 'পুষ্টি কথা' শুরু করেছে গ্রিন ডেইরি প্রকল্প। ডেনমার্ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ড্যানিডা গ্রিন বিজনেস পার্টনারশিপের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ভরত ভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে 'পুষ্টি কথা'র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এ আয়োজনে বিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি স্থানীয় নারী-পুরুষ, দুগ্ধ খামারি, কৃষক এবং স্থানীয় নেতা ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া দ্বারা পরিচালিত গ্রিন ডেইরি প্রকল্পটিতে অংশীদার হিসেবে রয়েছে প্রাণ ডেইরি, আরলা ফুডস, আইডিআরএন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এসইজিইএস ইনোভেশন এবং ড্যানিশ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কাউন্সিল।
মূলত বাংলাদেশের দুগ্ধখাতকে নিরাপদ, টেকসই এবং বাণিজ্যিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে কাজ করছে গ্রিন ডেইরি প্রকল্প। দশ হাজার দুগ্ধ খামারির আয় বৃদ্ধি (যার ৮০ ভাগই নারী), টেকসই খামার পদ্ধতি অনুশীলন ও জলবায়ু সহনশীলতা ছাড়াও এ প্রকল্পটি ৩০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে কাজ করছে। পাশাপাশি শিশুদের দুগ্ধপুষ্টি নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাবার গ্রহণ প্রচারেও ভূমিকা রাখছে প্রকল্পটি।
আরলা ফুডস-এর বৈশ্বিক উদ্যোগ 'ফুড মুভার্স' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে 'পুষ্টি কথা' কর্মসূচিটি সাজানো হয়েছে, যা একইসাথে প্রাণ ডেইরির নিরাপদ দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার সাম্প্রতিক উদ্যোগের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। উল্লেখ্য, নিরাপদ দুধ উৎপাদন ও গ্রহণে সলিডারিডাড ২০১৩ সাল থেকে বাজারভিত্তিক পদ্ধতিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
'পুষ্টি কথা' আয়োজনে বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শের পাশাপাশি পারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম ও শিশু-বান্ধব সেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ ও দুগ্ধ খামারিরা নিরাপদ দুধ সংরক্ষণের উপায়, জীবাণুমুক্ত রাখতে করণীয় ও পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করেন। এছাড়া খামারে উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে গ্রহণ পর্যন্ত কীভাবে দুধের গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়েও তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ পান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ড. মো. গোলাম হায়দার, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন, যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানসহ স্থানীয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আরলা ফুডস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লরেন্ট পন্টি, প্রাণ ডেইরির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান এবং সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট প্রধান মো. মুজিবল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যের অনুপ্রেরণায় তৈরি একটি ইন্টার্যাক্টিভ লুডো বোর্ড এবং সচেতনতামূলক তথ্যসমৃদ্ধ ছোট পুস্তিকা প্রদান করা হয়। এসব উপকরণে দুধ খাওয়ার উপকারিতা থেকে শুরু করে নিরাপদভাবে দুধ সংরক্ষণ, ফোটানো এবং জীবাণুমুক্ত রাখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
সেশনটি পরিচালনা করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শিমুল ইসলাম। এছাড়া দুধ পানের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়তে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে দুগ্ধজাত পণ্য বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গ্রিন ডেইরি প্রকল্পটি আরলার 'বিগ-ফাইভ' ধারণার ভিত্তিতে নির্মিত ইউরোপীয় দক্ষতাকে একত্রিত করে পরিচালিত হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হলো- গরুর জন্য কার্যকরী খাদ্য, খাদ্য সামঞ্জস্যতা, পশুর সুস্থতা, সার ব্যবস্থাপনা এবং ভূমির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা।
