দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্পে নীতিগত অসংগতির কারণে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ: ওয়ালটন এমডি
নীতিগত অসামঞ্জস্য, শুল্ক বিকৃতি এবং সরকারি ক্রয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পকে বড় ধরনের চাপে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং রপ্তানি বাড়ানোর জাতীয় প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হবে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় দেশের বিভিন্ন শিল্প খাতের অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্পউদ্যোক্তা উপস্থিত ছিলেন।
এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান এসআরওগুলো আমদানিকারক, সংযোজনকারী ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে কার্যকর পার্থক্য তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই তিনটি স্তরের মূল্য সংযোজন সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বলেন, 'নীতি যখন দেশীয় উৎপাদনের মূল্য সংযোজনকে স্বীকৃতি দেয় না, তখন বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারান। এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।'
শুল্ক অসামঞ্জস্যতার উদাহরণ হিসেবে রেফ্রিজারেটরের গ্লাস সেলফের বিষয়টি তুলে ধরেন ওয়ালটন এমডি। তিনি জানান, সেমি-ফিনিশড অবস্থায় এই পণ্য আনতে শুল্ক দিতে হয় ০ শতাংশ অথচ একই পণ্য দেশে তৈরি করতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় ৪৫ শতাংশ। তাঁর মতে, 'এটি সরাসরি দেশীয় উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশ আবারও আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে।'
সরকারি ক্রয়নীতিতেও বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, পিপিআর ও পিডব্লিউডি'র তালিকায় বিদেশি ব্র্যান্ডকে 'এ' ক্যাটাগরি এবং দেশীয় ব্র্যান্ডকে 'বি' ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে অথচ বাংলাদেশে তৈরি এসি, লিফট, ক্যাবলসহ বিভিন্ন পণ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে বিশ্বের নানা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ বিষয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'আমরা নিজ দেশে টেন্ডারে অংশ নিতেও বাধার মুখে পড়ি এটি অন্যায়'।
বৈশ্বিক বাজারেও দেশীয় পণ্য অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে বলে উল্লেখ করেন মাহবুবুল আলম। তিনি জানান, সাফটা চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি এসি রপ্তানিতে ২০ শতাংশ এবং ফ্রিজ রপ্তানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। অন্যদিকে ভারত 'সাফটা-প্লাস' সুবিধায় শূন্য শুল্কে একই পণ্য রপ্তানি করতে পারে। তিনি বলেন, 'এ ধরনের অসম বাণিজ্য কাঠামো আমাদের পণ্যকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে।'
পরিশেষে তিনি বলেন, জরুরি নীতি সংস্কার, শুল্ক কাঠামোর যৌক্তিকীকরণ এবং সরকারি ক্রয়ে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা না হলে দেশের দ্রুতবর্ধনশীল ইলেকট্রনিক্স শিল্প বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়বে।
