পূর্বাচলে শেখ পরিবারের ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়ে কেন ৬ মামলা
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে পূর্বাচল প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ অনুসন্ধান শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ছয়টি আলাদা মামলা করে কমিশন।
দুদক জানায়, পুরো ৬০ কাঠার প্লটটি ছয়টি আলাদা দলিলে ভাগ করে শেখ পরিবারের ছয় সদস্যের নামে ১০ কাঠা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি দলিল আলাদা হওয়ায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব প্লটের মধ্যে শেখ হাসিনার নামেও ১০ কাঠার একটি প্লট নিবন্ধিত ছিল।
ছয়টি মামলার বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়- শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জনকে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনকে, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনকে, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনকে এবং আরেক মামলায় রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনকে। পূর্বাচলের এই প্লটগুলো ছয় জনের নামে আলাদাভাবে নিবন্ধন হওয়ায় প্রতিটি বরাদ্দকে আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে দুদক ভিন্ন ভিন্ন মামলা করে।
পূর্বাচল প্লট দুর্নীতির অন্য তিন মামলায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তার আগে, গত ১৭ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
এদিকে পূর্বাচল প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আরও দুটি মামলা বর্তমানে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ওই মামলাগুলোতে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকের পাশাপাশি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও আসামি।
আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির আরেক মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত। রায়ে শেখ রেহানা, শেখ হাসিনা এবং রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শেখ রেহানাকে সাত বছরের কারাদণ্ড, তার বোন শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
একটি ঘটনায় ছয় মামলা কেন?
দুদক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, 'জমির অংশ এক হলে এক মামলায় করা যেত কিন্তু এখানে ৬০ কাঠাকে ছয় ভাগে আলাদা দলিলে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। প্রতিটি দলিল আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। প্রধান আসামি একই হলেও প্রতিটি বরাদ্দে সহযোগীরা আলাদা। তাই ছয়টি মামলা করা হয়েছে।'
একত্রে বিচার হলে বাধা কোথায় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'একত্রে বিচার হলে আসামিরা লঘুদণ্ড পেয়ে যেতেন। এতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবং খারাপ নজির তৈরি হতো। অপরাধ আলাদা হওয়ায় সাজাও আলাদা হওয়া উচিত।'
দুদকের আরেক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, 'যদি ৬০ কাঠার জমি এক দলিলে হতো তাহলে একটি মামলাই যথেষ্ট ছিল কিন্তু দলিলগুলো পৃথক হওয়ায় মামলা ছয়টি। মামলার আলামত ও ডকুমেন্টও আলাদা।'
অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে বসতবাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও সেই তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে পূর্বাচলে প্লট নেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা 'ক্ষমতার অপব্যবহার' করে তাকে সহায়তা করেন। আর টিউলিপ সিদ্দিক তার মাকে প্লট পাইয়ে দিতে খালা শেখ হাসিনাকে 'প্রভাবিত' করেন।
উল্লেখ্য, বিগত সরকারের সময়ে পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ রেহানার প্লট নম্বর ১৩, ববির প্লট নম্বর ১১, রূপন্তীর প্লট নম্বর ১৯, শেখ হাসিনার প্লট নম্বর ৯, জয়ের ১৫ নম্বর এবং পুতুলের প্লট নম্বর ১৭।
