পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি: হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার রায় সোমবার
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করবেন আদালত।
ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম সকাল ১১টার দিকে এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এই তারিখ ধার্য করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনিছুর রহমান মিঞা, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
গত ১৩ জানুয়ারি প্লট দুর্নীতির অভিযোগে শেখ রেহানাকে প্রধান আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
দুদকের এজাহারে দ্বিতীয় আসামি টিউলিপ সিদ্দিক এবং তৃতীয় আসামি শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে গত ১০ মার্চ এই মামলায় আরও দুজনের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। ১৭ জনের বিরুদ্ধে ৩১ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। গত ১৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮ নভেম্বর। এ মামলায় মোট ৩২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার ১৭ আসামির মধ্যে খুরশীদ আলম কারাগারে আছেন।
চার্জশিটে ১৭ আসামির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে
শেখ রেহানা নিজ বা পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও অসৎ উদ্দেশ্যে তা হলফনামায় গোপন করেছেন। পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি, নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘিত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই তার কাছে আবদার করে আবেদন করেন। ১০ কাঠার প্লট নিয়ে সরকারি জমি আত্মসাৎ করেন।
টিউলিপ জানতে পারেন তার খালা শেখ হাসিনা নিজের নামে এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নিচ্ছেন। এটি জানার পর তিনি ব্রিটিশ এমপি হিসেবে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিবের নামে ওই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে বিশেষ ক্ষমতাবলে রেহানার অনুকূলে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (এলোটমেন্ট অফ লেন্ড) রুলস, ১৯৬৯ এর বিধি-২, বিধি ৪, বিধি ৫, বিধি ৬, ও রুল ১৩ এ (১) (এ) লঙ্ঘন করা হয়েছে। অপরাধজনক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার মাধ্যমে নিজ ও পরিবারকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন। এছাড়া মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক যোগসাজশে নিজে এবং অপরকে শাস্তি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে নথি বিনষ্ট করেছেন৷
সালাহ উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে রেহানার অনুকূলে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। নিয়ম ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন কোটায় প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিতে প্রস্তাবকারী এবং প্রধানমন্ত্রী উক্ত প্রস্তাব মোতাবেক স্বাক্ষর করতেন। তিনি ও শেখ হাসিনা পরস্পর যোগসাজশে নথিটি গায়েব করেছেন মর্মে তদন্তে জানা গেছে।
সাইফুল ইসলাম ও পূরবী গোলদার দায়িত্ব পালনকালে বেআইনি আদেশ জারি করে রুলস অব বিজনেস ও সচিবালয়ের নির্দেশিকার ৯ নং বিধি দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অবৈধ নোটাংশে স্বাক্ষর করে অপরাধে সহায়তা করেছেন।
অলিউল্লাহ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এনডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অবৈধ আনুকূল্য পাওয়ার উদ্দেশ্য বা পরিতোষিক গ্রহণ ও প্রদান, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদানের দ্বারা রুলস অব বিজনেস ও সচিবালয়ে নির্দেশিকার বিধি-৮ লঙ্ঘন করেছেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নোটাংশে স্বাক্ষর করেন ও অপরাধে সহায়তা করেন।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত না হওয়ার পরও রেহানাকে বরাদ্দ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের নোটাংশে স্বাক্ষর করে অপরাধে সহায়তা করেছেন তারা।
রাজউকের আনিছুর রহমান, খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, নাসির উদ্দিন, সামসুদ্দিন আহমেদ, নুরুল ইসলাম রাজউকের ১১/২০২২ তম সভায় শেখ রেহানার অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দেন। এর ফলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৩/এ (১) সি এর বিধি ৪, ৫, ৬ ও বিধি ৯ লঙ্ঘিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর প্লট দুর্নীতির পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা, জয়, পতুলসহ ২৩ জন আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার একটি আদালত।
