মালয়েশিয়ায় চাকরি পেতে ৩০ হাজার রিংগিত পর্যন্ত গুনছেন বাংলাদেশিরা: মালয়েশিয়ার সাবেক মন্ত্রী
মালয়েশিয়ায় একটি চাকরি পেতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ৩০ হাজার রিংগিত পর্যন্ত (৮ লাখ টাকার বেশি) খরচ করতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্লানটেশন ও কমোডিটিজ মন্ত্রী জুরাইদা বিনতে কামারুদ্দিন। রোববার (২৩ নভেম্বর) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমিও আরও জানলাম। এই কর্মীদের বেশিরভাগই দরিদ্র এবং গ্রামাঞ্চল থেকে আসা। অনেকেই তেমন শিক্ষিত নন। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা নিয়োগ–এজেন্ট, গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দালালের দ্বারা শিকার হন।"
'বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন'-এর দ্বিতীয় দিনে "মাইগ্রেশন, মরালিটি অ্যান্ড পলিটিকস অব কমপ্যাশন" শীর্ষক এক সেশনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, "মালয়েশিয়ায় একটি চাকরি পেতে অনেক কর্মীকে ৩০ হাজার রিংগিত পর্যন্ত খরচ করতে হয়। এই অর্থ যোগাড় করতে তারা বাড়ি-জমি বিক্রি করেন, অথবা বড় অঙ্কের ঋণ নেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে দেওয়ার আশায় তারা মালয়েশিয়ায় আসেন। কিন্তু এখানে পৌঁছানোর পরও তারা আবার ঝুঁকির মুখে পড়েন।"
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার সাবেক এ মন্ত্রী আরও বলেন, "অনেক সময় প্রতিশ্রুত চাকরি প্রস্তুত থাকে না। কখনও কখনও প্রকৃত চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি কর্মী আনা হয়। এমন হলে তারা কাজ ছাড়া, আয় ছাড়া এবং কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া এক প্রকার ফাঁদে পড়ে যান।"
তিনি বলেন, "সম্প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ বাংলাদেশি কর্মীকে কোনো কাজ বা পারিশ্রমিক না দিয়েই দেশে ফেরত পাঠাতে হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এই কর্মীরা মানুষ, কোনো পণ্য নয়।"
তিনি জানান, বছরের পর বছর ধরে মালয়েশিয়া দুই মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীর আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। তারা প্লানটেশন, নির্মাণ, উৎপাদন, সেবাসহ বিভিন্ন খাতে যেমন কাজ করছেন, তেমনি মালয়েশিয়ার সামাজিক ও কমিউনিটি জীবনেও অবদান রাখছেন।
বড় একটি প্রবাসী সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী নিজ উদ্যোগে ব্যবসাও গড়ে তুলেছেন।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জুরাইদা আরও বলেন, "এ কারণেই আমি যখন হাউজিং (আবাসন) মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম, তখন বিদেশি শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও মানবিক আবাসন নিশ্চিত করতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আগে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা ছিল না। শ্রমিকরা গাদাগাদি করে অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হতেন।"
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল জাপানের প্রেসিডেন্ট জেমস অ্যাঞ্জেলাস, রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের এমেরিটাস ফেলো কারোরি সিংহ এবং ঢাকায় তুরস্কের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান।
সেশনটি সঞ্চালনা করেন নেপালের অ্যাকাউন্টেবিলিটি ল্যাবের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া লিড, নারায়ণ অধিকারী।
