পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পাসপোর্ট বা এনআইডি বাধ্যতামূলক হোক: ইসির সঙ্গে সংলাপে তাসনিম জারা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) ছয়টি দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এই সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষে অংশ নিয়েছেন— দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট ও এনআইডি দুটোকেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংলাপে আবেদন প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট অথবা এনআইডি—এ দুটির যেকোনো একটি বাধ্যতামূলক রাখার দাবি জানিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
তিনি বলেন, 'অনেক প্রবাসীর এনআইডি নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা যেতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'যে অ্যাপটি চালু হয়েছে, সে বিষয়ে পাওয়া প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে—অ্যাপটি ব্যবহারবান্ধব। তবে কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।'
নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রমাণ–উপাত্ত আছে উল্লেখ করে তাসনিম জারা বলেন, 'নিবন্ধন প্রশাসনের কাঠামো ও অংশগ্রহণ' সংক্রান্ত প্রতিবেদনের একটি সুপারিশ ছিল: 'নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং অংশগ্রহণের বাধা কমানো।'
তিনি বলেন, 'রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে সীমাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে—যেমন পাঁচ দিনের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে হবে। এটি আমাদের প্রবাসী ভাই–বোনদের অংশগ্রহণে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা তৈরি করবে।'
প্রবাসী ভোটের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের বাধা কমাতে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
'প্রথমত—১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে আবার অঞ্চল ভাগ করে মাত্র পাঁচ দিনের সীমা আরোপ করার প্রয়োজন নেই। এতে অনেকের অসুবিধা হবে এবং এই কৃত্রিম সীমাবদ্ধতার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পুরো সময়টিতে যেন সব অঞ্চল থেকেই নিবন্ধন করা যায়—সে ব্যবস্থা করতে হবে।'
'দ্বিতীয়ত—২৪ ঘণ্টা সক্রিয় সহায়তা লাইন রাখতে হবে এবং কত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে—তার একটি স্পষ্ট রূপরেখা দিতে হবে। পাশাপাশি সহায়তা লাইনগুলো আরও দৃশ্যমান করতে হবে।'
'তৃতীয়ত—পাসপোর্ট অথবা এনআইডি—দুটোর যেকোন একটি দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে দুটোর তথ্যই যাতে হাতে গোনা (ম্যানুয়ালি) দেওয়ার সুযোগ থাকে।'
ভুল তথ্য (মিসইনফরমেশন) ও বিভ্রান্তিকর তথ্য (ডিসইনফরমেশন) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের সময় বিশ্বব্যাপী এ ধরনের তথ্যের প্রসার বেড়ে যায়। বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও বেশি দেখা যায়।'
তিনি উল্লেখ করেন, 'আপনাদের যে প্রজ্ঞাপন—১৬-এর 'ঘ'-তে বলা আছে: 'প্রতিপক্ষ নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।'—নীতি হিসেবে এটি ভালো হলেও বাস্তবায়নের কোনো নির্দেশনা সেখানে নেই।'
তাসনিম জারা প্রশ্ন তোলেন, 'আপনাদের কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণের একটি সেল থাকবে? থাকলে কারা এটি পরিচালনা করবে? মনে রাখতে হবে, শুধু প্রার্থীই ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ান না; নামে–বেনামে, প্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকা ব্যক্তিরাও এটি ছড়াতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে? পর্যবেক্ষণ কে করবে? জনগণ কি এগুলো আপনাদের কাছে জানাতে পারবে?'
তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো—বহুমুখী অভিযোগ–জমা ব্যবস্থা চালু রাখা। যাতে মানুষ ফোন, ইমেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে দ্রুত জানাতে পারে। কেউ যদি দেখে—ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে—তাহলে জনগণ যেন সহজে নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে। কর্তৃপক্ষ নিজেরা পর্যবেক্ষণ করবে এবং জনগণের জন্যও প্রতিবেদন দেওয়ার চ্যানেল রাখতে হবে।'
তাসনিম জারা আরও বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, টিকটকসহ অন্যান্যগুলোর সাথে সহযোগিতা প্রয়োজন। যদি ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এই সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচন কর্তৃপক্ষের কাছে যখন রিপোর্ট আসবে বা নিজেদের পর্যবেক্ষণে কিছু পাওয়া যাবে—তখন যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়—প্রার্থীর সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আগেই।'
