অন্তর্বর্তী সরকার তাদের প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করেছে: প্রেস সচিব
অন্তর্বর্তী সরকার 'বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন' কিছু মানুষের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাস্তবে সরকার মাত্র ১৫ মাসেই তাদের প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করেছে।
শফিকুল আলম আজ (১৮ নভেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'আমি দৃঢ়ভাবে বলি—এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি। তারা তাদের প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।'
কেউ কেউ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের অদক্ষতার অভিযোগ করলেও তা নাকচ করে শফিকুল আলম বলেন, 'দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরেছে।'
বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারের দুর্বলতার কারণে 'পাল্টা শুল্ক সুবিধা দেবে না' এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করা হয়েছে কোনো লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই।'
সরকারের আইন প্রণয়ন বিষয়ক কাজের উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ড সংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত।'
জুলাই ঘোষণা ও সনদের প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, 'জুলাই ঘোষণা একটি ঐতিহাসিক নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং জুলাই চার্টার এমন এক রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তুলেছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করতে পারে।'
সরকারের অন্যান্য অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।'
তিনি বলেন, 'বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বন্দর অপারেটর লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—যা বাংলাদেশের শিল্প রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ।'
এ ছাড়া নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশের অবস্থানকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রে নিয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।
অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট রোধ করা হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে ৭ শতাংশ হয়েছে।
তিনি বলেন, 'আদালতের কার্যক্রম অনুযায়ী, অতীতের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বোধের আবির্ভাব ঘটেছে। শেখ হাসিনাকে তার অবস্থান দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরো বলেন, 'গুম বন্ধ হয়েছে। একসময়ের জাতীয় জীবনে আধিপত্যকারী বিএএল চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এবং একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এসেছে। পূর্ববর্তী নির্যাতনের ওপর নির্মিত জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলো এর প্রমাণ। এটি এক ফারুকি-ইফেক্ট।'
র্যাব এখন আইনের অধীনে পরিচালিত হয়, আর কোনো অনানুষ্ঠানিক মতবাদে নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ভিন্ন মতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে বলে শফিকুল আলম জানান।
গত ১৬ মাসে একটিও সাজানো 'ক্রসফায়ার' ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, 'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
সরকারের আরও অনেক সাফল্য রয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, 'ইতিহাসের এক আগ্রহী পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস — বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত কিছু অর্জন করতে পারেনি, যতটা অন্তর্বর্তী সরকার এই ১৫ মাসে করেছে।'
