নতুন উদ্যোগে প্রথম প্রান্তিকে রেলওয়ের আয় বেড়েছে ১৪২ কোটি টাকা
বাংলাদেশ রেলওয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪২ কোটি টাকা বেশি আয় করেছে। সংস্থাটির দুটি পরিচালন অঞ্চলেই এই আয় বেড়েছে। ফলে বছর শেষে বছরের পর বছর ধরে লোকসানে ডুবে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটি অবশেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার আশা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আফজাল হোসেন এই পারফরম্যান্সের পেছনে একাধিক উদ্যোগকে কৃতিত্ব দেন।
তিন টিবিএসকে বলেন, 'আগে কক্সবাজার রুটে একটি ট্রেন দিয়ে শুধু একটি ট্রিপ ছিল। আমরা এখন দুটি ট্রিপ চালাচ্ছি। বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে। আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ ও মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।'
আফজাল হোসেন আরও বলেন, 'ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি কমায় মালবাহী ট্রেনে আয় কমেছে। তবে যাত্রী খাত থেকে আয় বেড়েছে। ইঞ্জিন সংকট কাটাতে পারলে আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে, আয়-ব্যয়ের পার্থক্য কমে আসবে। আমরা আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে।'
রেলের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের দপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পূর্বাঞ্চলের আয় ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৩১০.৭৫ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০৬.১৫ কোটি টাকা।
একই সময়ে পশ্চিমাঞ্চলের আয় ২৮ শতাংশ বেড়ে ১৩৩.৫৩ কোটি টাকা থেকে ১৭০.০৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আয় বৃদ্ধি ও ব্যয় কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিকিট চেকিং বাড়ানো হয়েছে। টিকিট ছাড়া যেন ভ্রমণ নয়—এটি নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রী খাতে আয় বাড়াতে টিকেটের চাহিদা আছে, এমন ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত কোচের বিপরীতে শোভন চেয়ারে ২০ শতাংশ ও এসি চেয়ারে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত সারচার্জ বসানো হয়েছে। অধিক চাহিদাসম্পন্ন রুটের ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে অতিরিক্ত কোচ।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ঈদ, পূজা, পর্যটন মৌসুমসহ ছুটির দিনে জনপ্রিয় রুটে ট্রেনের সংখ্যা ও কোচ বাড়ানো হয়েছে। ফলে সংস্থাটির রাজস্ব বেড়েছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার রুটে প্রতিটি ট্রেনে আগে ১৬টি কোচ যুক্ত ছিল। তা বাড়িয়ে ২৩টি করা হয়েছে। সিলেট রুটের তিনটি ট্রেনে দুটি করে কোচ যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ ট্রেনও চালানো হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী অতিরিক্ত সারচার্জ আদায় করা হচ্ছে।
গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ে বছরে গড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে। বিরাট ব্যয়ের বিপরীতে আয় বাড়াতে পারছে না সংস্থাটি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
কর্মকর্তা মনে করছেন, প্রতি প্রান্তিকে যদি ১০০-১৫০ কোটি টাকা করে আয় বাড়ে, তাহলে বছর শেষে প্রায় ৫০০-৬০০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। এটি রেলের আয়ের বিপরীতে ব্যয় কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে এবং সংস্থাটিকে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৫৬৪.৯৫ কোটি টাকা। যদিও গতবছর প্রকৃত আয় হয়েছিল ১ হাজার ৭৬.৩২ কোটি টাকা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৩৪৩.৩৮ কোটি টাকা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১৫৯.৯৬ কোটি টাকা এবং আয় হয়েছিল ৬২১.৩১ কোটি টাকা।
