নির্বাচন করতে ১০-২০ কোটি টাকা লাগে, সেজন্য চিন্তা করতে হয় করব নাকি করব না: আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে বাস্তবতা, এ বাস্তবতায় অন্তত ১০–২০ কোটি টাকা না হলে নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তো এই বাস্তবতায় যাদের কাছে কালো টাকা আছে, তাদের সুযোগ আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অথবা কাউকে যদি কেউ দেয় (টাকা)। কিন্তু আপনি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করলে, নির্বাচিত হয়ে আসার পর তো আপনাকে তার স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে হবে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত 'নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'সেজন্য আমাদের বারবার চিন্তা করতে হয় যে ইলেকশন করব নাকি করব না। করলে কিভাবে করব? মানুষ কি টাকা ছাড়া ভোট দিবে? কিংবা বিদ্যমান যে কাঠামো, এই কাঠামোতে ইলেকশন করা আমাদের জন্য আসলে কতটুকু বাস্তবসম্মত?'
পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে গত ৫০ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো নতুন কোনো বয়ান হাজির করতে পারেনি৷ ফলে জিয়াউর রহমান যে ডিসকোর্স তৈরি করেছিলেন, তার ওপরই আমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছি। এজন্য সার্ক এখনো প্রাসঙ্গিক। ১৯৭৫ সালের পরই মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় থেকেই আমাদের ন্যাশনাল আউটলুকটা তৈরি হয়েছে।'
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, 'সেদিন শেখ হাসিনা দেশত্যাগের দুই ঘণ্টা হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা স্ট্যাবলিশমেন্টের কোলে গিয়ে উঠলেন। আমরা তখন ২৫–২৬ বছরের তরুণ ছিলাম, কিন্তু অগ্রজরা স্ট্যাবলিশমেন্টের হাতে দায়িত্ব দিয়ে এলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় তরুণদের প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আলোচনা করা হোক, কিন্তু আমাদের বলা হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টে যেতে। আমরা রাজি হইনি, পরে বঙ্গভবনকে আলোচনা স্থান নির্ধারণ করতে হয়।'
গণঅভ্যুত্থানের পর করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তিনটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল- সংস্কার, বিচার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর। কিন্তু যারা সংস্কারের কথা বলেছিলেন, তারাই কেউ কেউ পরে সংস্কারবিরোধী রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছেন।'
গোলটেবিল আলোচনায় কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, '৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যবর্তী সময়েই বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক যাত্রাপথ নির্ধারণ করা যেত। কিন্তু সেই সময়ের সুযোগ আমরা হারিয়েছি। তরুণ প্রজন্ম এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামী দিনে গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি৷ ঢাকা-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে জেলা ভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।'
আলোচনায় আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, 'ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। বিএনপি নেতারা মসজিদ-মাদ্রাসা, খানকা পরিদর্শন করছেন, আবার জামায়াত হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সভা করছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচন হবে। এখন প্রশ্ন হলো, নির্বাচনটি কতটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। নির্বাচন যদি সুন্দর না হয়, তাহলে আরও কঠিন বিপদ সামনে আসবে।'
