‘নোট অব ডিসেন্ট’ না রেখে ঐকমত্য কমিশন জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সাথে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে বিএনপির দেওয়া 'নোট অব ডিসেন্ট' [ভিন্নমত] অন্তর্ভুক্ত না করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, কমিশন এই কাজ করে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদের 'বিচার, সংস্কার, নির্বাচন: অন্তর্বর্তী আমলে বাংলাদেশ' বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গতকাল আমাদের সংস্কার কমিশন— ঐকমত্য কমিশন, তারা তাদের প্রতিবেদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। প্রধান উপদেষ্টা সেখানে স্বাক্ষর করেছেন, তিনি এটার চেয়ারম্যান। আমরা যেসব বিষয়ে একমত ছিলাম না, সেখানে আমরা "নোট অফ ডিসেন্ট" দিয়েছিলাম। সেই নোট অব ডিসেন্টগুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের।'
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'অবাক হয়ে আমরা লক্ষ করলাম—কালকে যখন ঐকমত্য কমিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করলো, নোট অব ডিসেন্টগুলো নেই। পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে, ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? এই ঐকমত্য কমিশন—এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এটা প্রতারণা।'
প্রতিবেদনটি দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'অবিলম্বে এই বিষয়গুলো যদি আপনার সংশোধন না করা হয়, তাহলে এটা ঐক্যের বিপরীতে যাবে। এটি সংশোধন করার প্রয়োজন আছে।'
মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান সংকটের মূল কারণ হিসেবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'সমস্ত সংকটগুলোর মূলে যে বিষয়টা আছে, সেটা হচ্ছে—একটা সত্যিকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, সেই পার্লামেন্টেই এই সমস্ত সমস্যাগুলো সংবিধানের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে এবং সেভাবেই দেশ চলবে।'
নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা সেই কারণেই ৫ই আগস্টের পরেই নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। আজকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, এই নির্বাচনটা যত দেরি হচ্ছে, ততই সেই শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, এখানে একটা এনার্জি [অস্থিতিশীল পরিস্থিতি] তৈরি করতে চায়, যাতে গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত না হয়—সেই ব্যবস্থাই তৈরি হচ্ছে।'
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবেন। ...সুতরাং আজকে যদি এর থেকে কোনো ব্যর্থতা ঘটে, এর থেকে বাইরে যান, তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই বহন করতে হবে—এ কথাটা আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই।'
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জাতি হিসেবে আমরা ঠিক কোন জায়গায় এবং কীভাবে যেতে চাই, তা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছি কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
'দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখছি, যত দিন যাচ্ছে, ততই আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ছি। বিভক্ত কারা করছে, কেন করছে—এটাও আমাদের উপলব্ধি করতে হবে', যোগ করেন তিনি।
