ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুলের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ সোমবার বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম। তিনি জানান, মো. নজরুল আজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেওয়া ও লেখার পর তাতে সই করতে অস্বীকার করেন। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম স্বীকার করেন যে তিনি ও তার পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ২০১৫ সালে তিনি ৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি টাকার বেশি) ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলিংটনে একটি বাড়ি কিনেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নামে ঢাকার তোপখানা রোডে ২০৭ কোটি টাকায় জমি কেনার সময় ২৮ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়, যার মধ্যে তিনি ৬ কোটি টাকা পান। এছাড়া জমি বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তার কাছ থেকে নিজের হিসাবে ১০ কোটি ও স্ত্রীর হিসাবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করেন।
এছাড়া কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এম এ খালেক তার নিজের ও ঘনিষ্ঠজনদের নামে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৯১ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ করেন। এই অর্থ আত্মসাতে নজরুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
দুদকের তথ্যমতে, নজরুল ইসলাম ঢাকার অভিজাত ১৪টি ক্লাবের সদস্য—এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বোট ক্লাব, ঢাকা ক্লাব ও গুলশান ক্লাব।
দুদক বলছে, নজরুল ইসলামের ঘোষিত ও অঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ২০০ কোটিরও বেশি। তার নামে ও নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে— বারিধারায় ৮ কাঠা জমির ওপর 'পুতুল হাউজ' নামে বিদেশিদের ভাড়ার জন্য নির্মিত ট্রিপ্লেক্স বাড়ি, গুলশান-১ এ ভাসাবির পেছনে ৩,২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বারিধারা ডিওএইচএসে ২,৮৪১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এ ৫ কাঠার ওপর দুই তলা অফিস ভবন, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ায় এম এ খালেক ও আজহার হোসেনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় 'প্রাইম শপ' নামে ১৮ কোটি টাকার কোম্পানি, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ীতে ২ কোটি টাকার সম্পদ, নিকুঞ্জে ৩ কাঠার ওপর আরেকটি 'পুতুল হাউজ' নামে ডুপ্লেক্স বাড়ি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আলু চাষের জন্য ক্রয় করা জমি, বসুন্ধরার ২০/এ/৫, ব্লক–জি, সায়েম সোবহান রোডে ৩,৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন সম্পদ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৫–২০ কোটি টাকার শেয়ার।
দুদক সূত্র জানায়, নজরুল ইসলামের অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান রয়েছে।
