আরপিও সংশোধনী নিয়ে আপত্তি, নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ
নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের যে খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, এ খসড়ায় পরিবর্তন আনার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে বিএনপি।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে- এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত অনেক বিষয়ে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়া উত্থাপন করা হয়েছে, তাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেখানে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।'
তিনি আরও বলেন, 'জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজস্ব দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না। এটাতে তাদেরও সম্মতি নেই, আমাদেরও নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। আরপিওর অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল, আমরা আমাদের মতামত জানিয়েছিলাম।'
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক নেতা বলেন, 'অধ্যাদেশে যেসব সংশোধনী এসেছে, তার অধিকাংশের সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু প্রতীকের বিষয়ে (নিজস্ব প্রতীকের বাইরে জোটের প্রতীক নিতে পারবে না) আমরা কখনোই সম্মত হইনি। আমার মনে হয়, সুষ্ঠু রাজনীতি ও নির্বাচনের স্বার্থে এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আমরা দলের পক্ষ থেকে এ কথা জানিয়েছি এবং হয়তো আনুষ্ঠানিক চিঠিও দেব নির্বাচন কমিশন ও আইন উপদেষ্টার কাছে।'
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, 'আমরা এ মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে প্রায় ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দিতে যাচ্ছি। প্রক্রিয়াটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যাতে তারা মাঠে নেমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে পারে।'
তারেক রহমানের ফোন কল পাওয়া নিয়ে আলোচনার বিষয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, 'আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাতই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হওয়াটা স্বাভাবিক।'
সরকারের দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে- এমন খবরে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'ওই দুই উপদেষ্টার বিষয়ে আমরা সরাসরি কিছু বলিনি। তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সরকার থেকে সরে আসা উচিত। তবে যদি তারা নির্বাচনে না আসেন এবং কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দেন, তাহলে তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা কাউকে সরাসরি পদত্যাগ করতে বলিনি। যারা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন, তারা যদি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দেন বা নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে সেটি তখন বিবেচনা করা যাবে।'
নির্বাচনে দলের বিপক্ষে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ালে বিএনপি কী ব্যবস্থা নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, "আশা করি কেউ দাঁড়াবে না। আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে ও আলোচনার মধ্য দিয়ে একক প্রার্থী নির্ধারণ করব। তারপরও যদি কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তাহলে সাংগঠনিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল হিসেবে মামলা দায়েরের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'শিগগিরই যদি তদন্ত শেষ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুতই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের (আইসিটিঅ্যাক্ট) অধীনে মামলা হতে পারে। এখন যদি জাতীয় পার্টি এসে আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন না করতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা।'
এক সাবেক সেনাপ্রধানের মন্তব্য- আগামী এক–দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন নাও হতে পারে- এ বিষয়ে বিএনপি কোনো শঙ্কা দেখে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, তাদের কেউ কি বলেছে যে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন চায় না? জনগণ তো নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। যদি প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বা তারও আগে নির্বাচন চায়, তাহলে নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের কোনো কারণ নেই।'
