বিদেশেও দুর্নীতি তদন্তের সুযোগ পাবে দুদক, আওতায় আসবেন বিদেশি নাগরিকরাও

দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নতুন ক্ষমতা পাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিদেশি নাগরিকদের এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দুর্নীতির তদন্ত করতে পারবে সংস্থাটি ।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে 'দুদক অধ্যাদেশ, ২০২৫'- নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'দুদক অধ্যাদেশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা ও বিধান সংশোধন করা হয়েছে, যাতে তদন্ত কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও কার্যকর হয়। 'এখন থেকে যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন—তারা বাংলাদেশি বা বিদেশি যেই হোন না কেন; তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে পারবে দুদক।'
উপদেষ্টা বলেন, 'এছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকরা অন্য দেশে অবস্থানকালে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে, সেটির তদন্তও করতে পারবে দুদক।'
তবে অন্য দেশে সংঘটিত দুর্নীতি দুদক কী প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান বা তদন্ত করবেন এ প্রশ্নের উত্তর দেননি আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আইনটি চূড়ান্ত হলে সেখানে বিস্তারিত থাকবে।'
তিনি জানান, 'জ্ঞাত আয়' শব্দটির সংজ্ঞা নিয়েও পরিষ্কার ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়েছে। আগে 'জ্ঞাত আয়' মানে বৈধ না অবৈধ—এই ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। এখন আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, 'জ্ঞাত আয়' মানে হচ্ছে বৈধ আয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন অধ্যাদেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় দুদকের নিজস্ব বিশেষ আদালত গঠনের বিধানও রাখা হয়েছে। যেখানে দুদকের অফিস থাকবে, সেখানেই দুদকের স্পেশাল কোর্ট স্থাপনের বিধান এসেছে।
তিনি বলেন, দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও আসছে পরিবর্তন। দুদকের চেয়ারম্যান বা কমিশনার নিয়োগের জন্য সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। এর নেতৃত্ব দেবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক। কমিটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থী আহ্বান করবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও জানান, নতুন আইনে তদন্ত, অনুসন্ধান ও এজাহার দায়েরের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে দুদকের। দুদকের কার্যাবলি ও ক্ষমতা আরও বিস্তৃত করা হয়েছে, যাতে তারা কার্যকরভাবে দুর্নীতি দমন করতে পারে।
আইন উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার বিষয়টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দুদকের কাজ দুর্নীতি দমন করা, কিন্তু তাদের ভেতরেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমরা আজকের সভায় এ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে তুলেছি।
তিনি বলেন, নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলেও, চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কার্যকারিতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, 'আমরা চাই, দুদক সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি দমনে জনগণের আস্থা অর্জন করুক।'