বর্ধিত মাশুল পুনর্বিবেচনার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের চিঠি

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল পুনর্বিবেচনার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম।
প্রায় ৪১% মাশুল বৃদ্ধি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর কার্যক্রম 'কস্ট-বেইজড অ্যান্ড সার্ভিস- ওরিয়েন্টেড'- মডেলে পরিচালিত হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং মুখ্য সচিবকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।'
আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মো. আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে ২৩টি খাতে বর্ধিত মাশুল আদায় শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে খরচ বেড়ে যায় সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত।
বন্দরের ৫২টি খাতের মধ্যে ২৩টিতে মাশুল বাড়ানোর আগে এশিয়ার ১০টি ও আন্তর্জাতিকভাবে ১৭টি বন্দরের কার্যক্রম ও ট্যারিফ পর্যালোচনা করা হয়। এ কাজে স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডম সহযোগিতা করে।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম চিঠিতে বলা হয়, ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ ট্যারিফ কাঠামো প্রণয়নের সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার ছিল ৩০.৬১ টাকা। বর্তমানে (২০২৫ সালে) এই হার ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে, অর্থাৎ বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফেই কার্যত চার গুণের বেশি বেড়ে গেছে।
গত কয়েক দশকে বন্দরের সার্ভিস ফি, হ্যান্ডলিং চার্জ, পাইলটেজ, ডেমারেজ ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ট্যারিফ ধাপে ধাপে বেড়েছে। ফলে বর্তমানে অতিরিক্ত বড় পরিসরে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ করলে তা আমদানি-রস্তানির ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে।
চট্টগ্রাম বন্দর একটি সেবাদানকারী সংস্থা, কোনো বাণিজ্যিক লাভকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান নয় উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদ্যমান ট্যারিফ আদায়ের মাধ্যমেই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করার পরেও বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের সংরক্ষিত তহবিলে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মাসুল বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব ট্যাংকার, বাল্ক কার্গো, কনটেইনার ও অন্যান্য জাহাজ আগমন করে, সেগুলো দেশের জ্বালানি, খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রিন্সিপালদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহ, যেগুলোর ভিত্তি বিদ্যমান ট্যারিফ কাঠামো। ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা হ্রাস পাবে এবং চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিকভাবে একটি অনিশ্চিত ও ব্যয়বহুল গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হবে।
মাশুল বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়, রপ্তানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।
আমদানি পণ্যের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে জ্বালানি, গম, সার ও শিল্প কাঁচামালের ক্ষেত্রে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেশের মূল্যস্ফীতির ওপর পড়বে। আন্তর্জাতিক শিপিং কমিউনিটির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা কমে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অবকাঠামোগত সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে 'কস্ট-বেইজড অ্যান্ড সার্ভিস-ওরিয়েন্টেড'- মডেলে পরিচালিত হওয়া উচিত উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, কেবল রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ট্যারিফ বাড়ানো সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ সূচক এবং আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্সেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রাখা হোক এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি সময়োপযোগী পর্যালোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডার (স্থানীয় শিপিং এজেন্ট, আমদানি-রপ্তানিকারক, জাহাজ মালিক, ব্যবসায়ী সংগঠন)- এর সঙ্গে পরামর্শক্রমে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক ট্যারিফ কাঠামো নির্ধারণ করা হোক।
বন্দরের কাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সেবা-ভিত্তিক এবং অলাভজনক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা হোক।