শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
আগামী রোববার (১২ অক্টোবর) মামলার চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরুর জন্য দিন ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করবে ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ মামলার শেষ সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা (ক্রস-এক্সামিনেশন) শেষ হলে যুক্তি উপস্থাপনের দিন নির্ধারণ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী। টানা তিন দিন তিনি সাক্ষ্য দিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। তার জবানবন্দিতে বলা হয়, গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অসংখ্য প্রমাণ ও তথ্যচিত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন টানা তিনদিন তাকে জেরা করেন। এ মামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তি, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং দুই তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন এ মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৭। এর মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠায়, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠায় এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়।
এ মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, 'এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। যুক্তি উপস্থাপনের সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হবে।'