ইসলামী ব্যাংকে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন

ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণের সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ব্যাংকটির গ্রাহক ও কর্মকর্তারা।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে ব্যাংকটির মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ব্যাংকটির পর্ষদ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বহু কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। তারা অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক দখলের পর ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পদমর্যাদায় শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলা থেকেই ৭,২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ৪,৫০০ জনেরও বেশি কর্মী শুধু পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাদের অভিযোগ, দেশের বাকি ৬৩টি জেলার চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে একটি বিশেষ জেলার প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকের শৃঙ্খলা চরমভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '২০১৭ সাল ব্যাংকটির পর্ষদ এস আলমের দখলে চলে যায়। তখন কোনো নিয়ম অনুসরণ না করেই অনেক জনবল অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকখাতে সংস্কার শুরু হয়। তাই সম্প্রতি ৫ হাজার বেশি কর্মকর্তার তালিকা করে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ সংখ্যক কর্মকর্তারা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা ও ব্যাংকটির নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। সেটার প্রতিবাদেই আজকে গ্রাহকরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছেন।'
তিনি আরও বলেন, গত সাত বছরে ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর বড় একটি অংশকে কোনো ধরনের সার্কুলার বা পরীক্ষা ছাড়াই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, এমনকি ভুয়া তথ্য ও জাল সনদ ব্যবহার করে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমান পর্ষদ গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ও পেশাদার কর্মীদের স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নিলেও অভিযুক্তরা সেই পরীক্ষা বর্জন করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যাংকের গ্রাহক শাহিন আহমেদ খান বলেন, 'ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের সময় জাল-জালিয়াতি করে তাদের নিজেদের কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অনিয়ম ও হাজার হাজার টাকা পাচার হওয়ার কারণে ব্যাংকটির অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হয়। যারা অবৈধ নিয়োগ পেয়েছিল তাদের পরীক্ষার আয়োজন করলেও বেশিরভাগ অংশগ্রহণ না করে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়েছিল। ব্যাংকটির স্বার্থে তাদের অবৈধভাবে নিয়োগকারীরার যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি ও পাশ করতে পারে নাই তাদের বহিষ্কার করতে হবে।'
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী শাহিন আহমেদ খান, মো. মোতাসিম বিল্লাহ, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. ইমাম হোসাইন, অ্যাডভোকেট ওয়লিউল্লাহ, হাফিজুর রহমান ও ডিএম শওকত আলী।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ব্যাংকটি থেকে বিভিন্ন সময় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ ঋণ বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যার ফলে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সময়ে ইসলামী ব্যাংকে চট্টগ্রামভিত্তিক বহু ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিলে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়।