ক্ষমতায় গেলে এজেন্ডা কী হবে জানতে চাইল ইইউ প্রতিনিধিদল, যা জানাল জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইলেকশন অবজারভেশন মিশনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। আজ রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বসুন্ধরায় ডা. শফিকুর রহমানের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল আমিরে জামায়াতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করাই তাদের সফরের মূল উদ্দেশ্য। তারা নির্বাচনকালীন ৬৪টি জেলায় পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং প্রতিটি জেলায় একজন প্রতিনিধি পাঠাবেন। নির্বাচন শেষে পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে তারা আমিরে জামায়াতকে অবহিত করেন।
ডা. শফিকুর রহমান প্রতিনিধিদলকে জানান, শুধু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়, বরং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইইউয়ের টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন।
বৈঠকে প্রবাসীদের ভোট ও ভোটাধিকার সম্পর্কে জানতে চায় প্রতিনিধিদলটি। তখন আমিরে জামায়াত বলেন, জামায়াতই প্রথম এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিয়ে দাবি তুলেছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসি ও সরকার তা গ্রহণ করে ইতোমধ্যে প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পেলে মূল এজেন্ডা কী হবে- সে বিষয়ে জানতে চায়। এ ব্যাপারে আমিরে জামায়াত তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন।
প্রথমত: এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিকতা, উৎপাদনমুখী, টেকনিক্যাল, দক্ষতা, বৈষয়িক, মানবিক সবদিক থেকে নাগরিকেরা যাতে যোগ্য হতে পারে, সে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দ্বিতীয়ত: করাপশন ফ্রি (দুর্নীতিমুক্ত) সোসাইটি গড়ে তোলা হবে। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি চেপে বসেছে। জামায়াতে ইসলামী দায়িত্ব পেলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা হবে।
তৃতীয়ত: সোস্যাল জাস্টিস। জামায়াত আমির এ প্রসঙ্গে বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচারের দারুন সংকট আমাদের সমাজে রয়েছে। এ সময় আমিরে জামায়াত বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে কীভাবে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ভিন্নমতের ওপরে জুলুম করা হয়েছে, তাকেসহ নেতা-কর্মীদের কারাবরণ করতে হয়েছে, এসব বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে ইইউয়ের ইলেকশন অবজারভেশন টিম এসেছিল। তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির-সেক্রেটারিসহ অনেকে আমরা কারাগারে ছিলাম। সে সময় দলের পক্ষে নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন ডেলিগেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান আরও উল্লেখ করেন, বিগত দেড় যুগে গণতন্ত্র দমন, বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন এবং জামায়াতে ইসলামীর সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত, তবে শর্ত হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে তার আলোকে নির্বাচন অবশ্যই ফ্রি, ফেয়ার ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সবশেষে আমিরে জামায়াত প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। প্রতিনিধিদলটি জানিয়েছে, তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আবারও বাংলাদেশ সফরে আসবে এবং ঘনিষ্ঠভাবে মতবিনিময় করবে।