রাকসু: ছাত্রদল চায় দুর্গাপূজার পর, নির্ধারিত সময়ে চায় শিবির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে ছাত্রদলসহ অন্তত পাঁচটি প্যানেল। পোষ্য কোটা ইস্যুতে অস্থিরতা এবং দুর্গাপূজার ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার কারণে নির্বাচন দুর্গাপূজার পর আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে এ দাবির বিরোধিতা করছে শিবির সমর্থিত প্যানেল।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলসহ অন্তত পাঁচটি প্যানেল, বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং হল সংসদের প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির পর লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি করেছেন তারা। এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, আর দুর্গাপূজার ছুটিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়ছে। প্রার্থীরা দাবি করেছেন, এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই ২৫ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত নির্বাচন পেছানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে দুর্গাপূজার ছুটির পর নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, 'আমরা প্রচারণায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাচ্ছি না। তারা অধিকাংশই পূজার ছুটিতে বাড়ি চলে গেছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করব আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করুন। আমার মতামত, নির্বাচন যেন দুর্গাপূজার ছুটির পরেই হয়।'
ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন সোয়া টিবিএসকে বলেন, 'রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষার্থীরা যদি না থাকে তবে এই নির্বাচন হবে প্রহসনমূলক। আমরা চাই পোষ্য কোটার ইস্যুটি সমাধান করে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।'
তিনি আরও বলেন, 'এখনও নির্বাচনের দুদিন বাকি আছে। প্রশাসন চাইলে এটি সমাধান করে ২৫ তারিখে নির্বাচন দিতে পারে।'
সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী তাহসিন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'ক্যাম্পাসে চলমান শাটডাউন কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বিমুখ হচ্ছেন। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিপাকে পড়ছেন। কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আবাসিক নয়। শিক্ষার্থীরা যদি ক্যাম্পাসে না আসে তবে আমরা কীভাবে প্রচারণা চালাব?'
তিনি বলেন, 'এছাড়া পোষ্য কোটার ইস্যুটি এখনও সমাধান হয়নি। তাই আমরা বলছি, পোষ্য কোটা ইস্যু সমাধান করে নির্বাচন দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে চাই না।'
তিনি আরও যোগ করেন, 'আমাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সংসদের অন্তত পাঁচটি ও হল সংসদের ৬-৭টি প্যানেল রয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাদের অবস্থানের সঙ্গে একমত।'
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ টিবিএসকে বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন পেছানোর অপরাজনীতি যারা করছেন, তারা মূলত নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে।'
রাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার এফ নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'এটি সত্য যে পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়ছেন। অনেক প্রার্থী তাই নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন। আবার অনেক প্রার্থী নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন চান।'
তিনি আরও বলেন, 'বিকেলে আমরা বৈঠক ডেকেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচন পেছানো হবে কি না।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইরফান তামিম বলেন, 'দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সনাতন শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ভোটের আগে চলে যাবে—এটা পূর্বানুমিত ছিল। কিন্তু পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে চলা কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৪০-৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। আগামী দুই দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব টিবিএসকে বলেন, 'নির্বাচনের বিষয়টি পুরোপুরি কমিশনের। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে।'
