প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ চালু করবে ইসি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের জন্য তৈরি হচ্ছে 'পোস্টাল ভোট বিডি' নামের অ্যাপ। নিবন্ধিতদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে যথাসময়ে পোস্টাল ব্যালট পেপার পাঠানোর পর, ভোট নিয়ে ফেরত আনা হবে দেশে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার প্রাথমিক পদ্ধতি তুলে ধরে ইসি সচিব বলেন, "নিবন্ধিতরাই পোস্টাল ব্যালট পেপারে ভোট দিতে পারবেন। কোনো প্রবাসী নিবন্ধন করে দেশে এসে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। নিবন্ধনের জন্য 'পোস্টাল ভোট বিডি' নামে অ্যাপ তৈরি হচ্ছে।"
তিনি জানান, এ অ্যাপটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। কবে নাগাদ নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা পরে জানানো হবে। এ ছাড়া ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পেপার কবে পাঠানো হবে এবং প্রবাস থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসবে- তা নির্বাচনের তফসিলের উপর নির্ভর করছে। সেজন্য পরে বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হবে।
প্রবাসীদের পাশাপাশি নিবন্ধিত দেশের অভ্যন্তরে ভোটে নিয়োজিত কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরও অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে।
ইসি সচিব বলেন, "নির্দিষ্ট সময়ে খাম পাঠানো হবে প্রবাসীদের কাছে। ব্যালট পেপারে ক্যান্ডিডেটদের (প্রার্থীদের) নাম থাকবে না। শুধু থাকবে সিম্বল (প্রতীক)। এবং প্রতীকের পাশে একটা স্পেস করে দেওয়া থাকবে। সেই স্পেসে তারা টিক চিহ্ন অথবা ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোটটা দিবেন।"
তিনি জানান, একটা বড় খামের মধ্যে তিনটা খাম দিয়ে প্রবাসীদের ঠিকানায় পোস্ট করা হবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে। একটা ব্যালট পেপার- আরেকটা খামের ভিতরে ভরে দেওয়া থাকবে। ভোট দেওয়ার পর খাম ফেরত পাঠাবে। এরমধ্যে নির্দেশনাও থাকবে।
প্রবাসীদের ভোটের বিষয়টি কবে শুরু হবে জানতে চাইলে ইসি সচিব জানান, "এটা কবে নাগাদ শুরু করতে পারব– এটা সিডিউল (নির্বাচনের তফসিল) ঘোষণার সাথে সম্পর্কিত।এটা সিনক্রোনাইজ করে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।"
ইসি সচিব বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক টিমের সঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বর ইসির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। দুপুরে এ টিম আসবে। তাদের সঙ্গে ইসি কর্মকর্তাদেরও একটা টিম থাকবে।"
নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন সামগ্রীর মূল কেনাকাটা চলতি সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে বলে জানান ইসি সচিব।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে মার্কিং সিল, গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, হেসিয়ান ব্যাগসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম এসেছে। ৭০ শতাংশ কেনাকাটার কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী সব সামগ্রী পৌঁছে যাবে।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো আদালত ও কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না। কিন্তু, বাগেরহাট, ফরিদপুরে বিক্ষোভ হয়েছে। আদালতে অন্তত ১৮টি রিট হয়েছে।
এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব বলেন, "বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এখনই এনিয়ে কথা বলা সমীচীন হবে না।"
তিনি বলেন, সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে আইনে যেমন সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে, তেমনি আদালতে যাওয়ার নাগরিক অধিকারও সবার। সেক্ষেত্রে সার্বিক বিষয়ে আদালতের বিবেচনার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বৃহস্পতিবারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পেয়েছে বলে জানান ইসি সচিব। নির্বাচন কর্মকর্তাদের সার্ভিস গঠন ও এনআইডি ইসির অধীনে রাখার বিষয়ে সভায় সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিং করে এ বিষয়ে জানাবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
সংলাপসূচি, নিবন্ধন চূড়ান্ত আগামী কমিশন সভায়
নতুন দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন ও অংশীজনের সঙ্গে সংলাপসূচি নির্ধারণ আগামী কমিশন সভায় চূড়ান্ত হবে বলে জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
২২টি নিবন্ধন আগ্রহী দলের সরেজমিন তদন্ত শেষ হয়েছে। তিন শতাধিক পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের আবেদন করেছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের কথা রয়েছে।
সচিব বলেন, "সিইসি কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন বৃহস্পতিবার। আগামী রোববার-সোমবার কমিশন সভা হতে পারে। কমিশন সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা করে দল নিবন্ধন চূড়ান্ত, সংলাপ শুরুর নির্ধারিত তারিখ এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত হবে।"
সীমানা নির্ধারণ হয়েছে ৩০০ আসনের। এরইমধ্যে সংক্ষুব্ধ অনেকে আদালতে রিট করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে ইসি।