৮ মাসে ২,৬১৬ খুনের মামলা, দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকা ঘটনার মামলাও অন্তর্ভুক্ত: সরকার
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রথম আট মাসে ২,৬১৬টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে খুন এবং কিছু অপরাধের বৃদ্ধি কেবল সহিংসতার বৃদ্ধি নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা মামলাগুলো অবশেষে দায়ের হওয়ার প্রতিফলন। এসব মামলার মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে সংঘটিত হত্যার ঘটনাও হয়েছে।
আজ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ডেটাসেট ও বিবৃতিতে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত অপরাধসংক্রান্ত পরিসংখ্যানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ ১৩ মাসে খুনের হার বেশি বলে মনে হলেও এর আংশিক কারণ হলো শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত কমপক্ষে ১ হাজার ১৩০টি খুনের ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থানের পরে অর্থাৎ ৬ আগস্ট, ২০২৪ সালের পর থেকে এই বছরের আগস্টের মধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে।
বলা হয়, এখন মানুষ রাজনৈতিক প্রভাবশালী অপরাধীদের বিরুদ্ধেও সহজে মামলা করতে পারছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা আগে ভুক্তভোগীদের মামলা করতে বাধা দিত, বিশেষ করে যদি অপরাধীরা তাদের দলের কর্মী হয়। শেখ হাসিনার আমলে অপরাধের তথ্য কম দেখানো হতো। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নিতেও পুলিশ অনিচ্ছুক ছিল।
ডেটাসেটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডাকাতির ঘটনা ১ হাজার ৪০৫ (২০২৪) থেকে কমে ১ হাজার ৩১৪ (২০২৫) হয়েছে, তবে ২০২৩-এর প্রথম ছয় মাসের তুলনায় এখনও বেশি। এর কারণ হলো সমস্ত ডাকাতির ঘটনা এখন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই থানায় রেকর্ড করা হচ্ছে।
থানাগুলোর মধ্যে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে নাগরিকরা ভয় বা দ্বিধা ছাড়াই অপরাধের অভিযোগ করতে পারছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ এর অধীনে অপরাধের সংখ্যা ১ হাজার ২২৬ (২০২৪) থেকে কমে ৬৫১ (২০২৫) হয়েছে। দাঙ্গার ঘটনাও ১২৫ (২০২৪) থেকে কমে ৫৯ (২০২৫) হয়েছে। চুরির ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে: ৮ হাজার ৬৫২ (২০২৪) থেকে ৬ হাজার ৩৫৪ (২০২৫)।
বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েকটি ক্যাটাগরিতে; বিশেষ করে চুরির ঘটনা প্রকৃতপক্ষে কমেছে, যা আইনশৃঙ্খলার উন্নতির পাশাপাশি স্বাধীনভাবে মামলা দায়ের করার পরিবেশকে ইঙ্গিত করছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ভয় ছাড়াই এখন ভুক্তভোগীরা রিপোর্ট করতে পারছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে কোনো নাগরিককে নিরুৎসাহিত করেন না বা বাধা দেন না।
আরও বলা হয়, এ থেকে বোঝা যায় যে রিপোর্ট করা সহিংস অপরাধ (যেমন: খুন) বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ অপরাধ নিম্নমুখী প্রবণতার দিকে ঝুঁকছে, যা উন্নত আইন প্রয়োগ এবং সঠিকভাবে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া উভয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে।
তবে সরকারের দাবি অনুযায়ী মামলার সংখ্যা কমলেও, ডেটাসেটের বিশ্লেষণে দেখা গেছে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে গড়ে ৭৯৩টি চুরির মামলা দায়ের হয়েছে, যা গত বছরের মাসিক গড় ৭২১-এর চেয়ে বেশি।
