দেশে পোর্টেবল এআই-চালিত আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস আনছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান

দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে এক 'যুগান্তকারী' সংযোজন হতে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড ডিভাইস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান 'এক্সো ইমেজিং' বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ হক ও সন্দীপ আক্কারাজু।
আজ (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা নাগাদ প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ খবর জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং এক্সো'র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ইউসুফ হক বলেন, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোতে এই ডিভাইসটি চালু করা হবে। তবে গ্রামীণ ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এর সুবিধা পৌঁছে দেওয়াই তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য।
তিনি বলেন, 'এই ডিভাইসটি সহজে বহনযোগ্য এবং অত্যন্ত কার্যকরভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চমানের রোগ নির্ণয় সেবা নিশ্চিত করবে।'
তিনি আরও যোগ করেন, 'এটি বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে গ্রামীণ বাংলাদেশের মতো জায়গায় স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাবে। ডাক্তার ও নার্সরা শিগগিরই এটি স্টেথোস্কোপের মতো ব্যবহার করবেন।'
এক্সো'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ আক্কারাজু জানান, এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। বর্তমানে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন নিয়ে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'শিগগিরই আমরা মেক্সিকো এবং লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশেও এটি চালুর পরিকল্পনা করছি।'
এই এআই-চালিত পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড ডিভাইসটি হৃদরোগ, যক্ষ্মা, স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা এবং গর্ভাবস্থাসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একটি বড় পদক্ষেপ।
'এটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা অসাধারণ। আমরা জানি, রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমেই চিকিৎসা শুরু হয়। রোগীরা প্রায়ই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই প্রযুক্তি রোগীকে ডায়াগনস্টিকসের কাছাকাছি নিয়ে এসে সেই ভোগান্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে', বলেন তিনি।
এক্সো'র বোর্ড সদস্য ও ইন্টেল করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ইশরাক বলেন, 'বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি একটি "গেম চেঞ্জার"। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই ধরনের প্রযুক্তি সেই ব্যবধান কমাতে সাহায্য করতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'এটি মূলত পরবর্তী প্রজন্মের স্টেথোস্কোপ—একটি শক্তিশালী টুল যা তাৎক্ষণিক, এআই-নির্ভর ডায়াগনস্টিক তথ্য সরবরাহ করে।'
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান, বিডা'র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।