লুট হচ্ছে বালু-পাথর; হুমকির মুখে সিলেটের রংপানি পর্যটনকেন্দ্র

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের পাথর লুট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেই জেলার আরেক পর্যটনকেন্দ্র থেকে বালু ও পাথর লুট করা হচ্ছে।
লুটপাটে ইতোমধ্যে প্রায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার এই পর্যট্ন আকর্ষনীয় স্থান শ্রীপুর। বর্তমানে এটি রংপানি নামে পরিচিত। রংপানি নদী থেকেই এ নামকরণ করা হয় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপানি নদী একেবারে ভারত সীমান্ত লাগোয়া। ফলে এই স্থানে সাধারণত পর্যটকদের যেতে দেওয়া হয় না। মানুষের আনাগোনা কম থাকায় এখানে অবাধে লুটপাট চলছে।
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের রাংপানি নদ। পাহাড়ি এই নদের উৎপত্তি ভারতের মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়ের রংহংকং জলপ্রপাত থেকে। নদীটির উৎসমুখ ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে 'শ্রীপুর রাংপানি' নামে পরিচিতি।
পাথর আর বালিময় নদী, ঝর্ণা পাহাড়, মেঘ দেখতে এই স্থানে জড়ো হন পর্যটকরা। তবে সম্প্রতি পাথর ও বালু লুট করে শ্রীহীন করে ফেলা হয়েছে এই পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকাকে। নদীর তীরে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে তুলে নেওয়া হয়েছে বালু ও পাথর।
স্থানীয়রা জানান, এই পাথর লুট করে নিয়ে রাখা হয় রাংপানি ক্যাপটেন রশিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে। সেখান থেকে ট্রাকে করে শহরসহ সারাদেশে পাথর নিয়ে যাওয়া হয় নির্বিঘ্নে।

প্রশাসনের অভিযান
ব্যাপক লুটপাটের পর রাংপানি নদীতে অভিযান চালিয়েছে টাস্কফোর্স। অভিযানে ৩৫ ট্রাক বালু ও পাথর জব্দ করা হয়। জব্দকৃত আনুমানিক ২০ হাজার ঘনফুট পাথর মঙ্গলবার রংপানি নদীতে পুনঃস্থাপন ও ২৮ হাজার ঘনফুট বালু উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হয়।
অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অভিযানে বাংলাবাজার সংলগ্ন নদী তীর থেকে প্রায় ৩৫ ট্রাক বালু জব্দ করা হয়। পরে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে জব্দকৃত বালু ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ফারজানা আক্তার লাবনী বলেন, 'সীমান্তঘেঁষা ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় রংপানিতে নিয়মিত নজরদারি রাখা কষ্টকর। এই সুযোগে এখানে লুটপাট চলছে। তবে এখন থেকে পাথর চুরির ঘটনাগুলো প্রতিরোধে আরও কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান জানান, 'রাংপানি এলাকায় পাথর লুট বন্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। কারণ পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই লুটকারীরা ভারত সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়ে।'
জাফলংয়ে পাথর লুটের ঘটনায় মামলা
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন আকর্ষনীয় স্থান জাফলংয়ে পাথর লুটপাটের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় দেড়শ' জনকে আসামি করা হলেও কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি, সবাই অজ্ঞতনামা।

সোমবার (১৮ আগস্ট) রাতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বাদি হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমদ।
মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি তোফায়েল।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট গভীর রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যে জাফলংয়ের ইসিএভুক্ত এলাকা থেকে অন্তত ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর লুটপাট হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসি তোফায়েল।
এরআগে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় গত সপ্তাহে খনিজ সম্পদ ব্যুরোর পক্ষ থেকে করা মামলায়ও কারো নাম উল্লেখ না করে প্রায় ২ হাজার জনকে আসামি করা হয়।
জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত জাফলংয়ের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) এলাকায় প্রকাশ্যে বালু-পাথর লুটের ঘটনা ঘটে। লুটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে সেই মামলা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
বিএনপি নেতা জাফলংয়ের শাহ আলম স্বপন ও রফিকুল ইসলাম শাহপরান পাথর লুটের সাথে অভিযুক্ত থাকায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জাফলং পাথরে বালু, লুটপাটে জাফলংয়ের শাহ আলম স্বপন ও রফিকুল ইসলাম শাহপরান সিন্ডিকেটের মধ্য লুটপাটের বাটোরা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে কয়েকবার। তার পরেও থেমে নেই লুট পাট। প্রতিদিনের লুটপাটের লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ হয়েছে ওই নেতাদের।