ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। শনিবার (৯ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই ঘোষণা দেন।
এ সময় উপাচার্য বলেন, ১৭ জুলাইয়ের 'ফ্রেমওয়ার্ক' অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, 'নিবর্তনমূলক কোনো রাজনীতি আমরা চাই না। যে রাজনীতি গণরুমের জন্ম দেয়, সেটি আমরা চাই না। ১৭ জুলাই তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ, তা বলবৎ থাকবে।'
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য রোববার সকাল ১১টায় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ জানানন, প্রশাসন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠকে বসবে।
এর আগে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে এবং হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মধ্যরাতে বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন। রাত ১২টার দিকে মুহসিন হল থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও অন্যান্য হল প্রদক্ষিণ করে রোকেয়া হলের সামনে পৌঁছায়। পরে রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও ফটকের তালা ভেঙে মিছিলে যোগ দিলে তারা রাত ১টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন।
পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। রাত দেড়টার দিকে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান তাদের সঙ্গে কথা বলতে এলে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো পেশ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'ওয়ান টু থ্রি ফোর হল পলিটিক্স নো মোর', 'গেস্টরুমের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'গণরুমের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'হলে হলে রাজনীতি, চলবে না চলবে না'সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারাও এই দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেন। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সামিয়া আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'আমরা হলে গুপ্ত-প্রকাশ্য সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাই। একইসাথে হলে হলে থাকা "ছোট ছোট টিমের" সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে হবে ও কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।'
উপাচার্য ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা সামনে ডাকসু নির্বাচন করতে যাচ্ছি। এটি আমি আশ্বস্ত হলাম, ডাকসুর ব্যাপারে তোমাদের পজিটিভ মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।'
উপাচার্যের ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান। এরপর প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত বহাল ছিল, উপাচার্য আজ জানিয়েছেন, ১৭ জুলাইয়ের সেই সমঝোতা বহাল থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে ফোর্স করতে পারি না। তবে নিয়ম ভাঙার বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির যে সভা আছে, সেখানে আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এছাড়া যেসব ছাত্রসংগঠনের কথা আসছে, আমরা তাদের সাথেও বসব।'
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফারুক শাহ।