'৩৬ জুলাই'-র প্রদর্শনী বাধাগ্রস্ত করতে কিছু বামপন্থী 'দেউলিয়া' ছাত্রসংগঠন 'পরিকল্পিত মব সৃষ্টি' করেছে: ছাত্রশিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) '৩৬ জুলাই' উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে বাধা দিতে কিছু বামপন্থী ছাত্রসংগঠন 'পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি' করেছে—এমন অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির দাবি, 'বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' নিয়ে আয়োজিত তাদের তথ্যভিত্তিক প্রদর্শনীকে 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত' করতে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়েছে।
গতকাল রাত (৫ আগস্ট) সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ এমন অভিযোগ করেন।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোকে উদ্দেশ্য করে ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'তারা আজও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য বর্ণচোরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু তারা জানে না জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সেই ফ্যাসিবাদকে ইতিহাসের গর্তে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর তাদের বিভাজনের রাজনীতিও আজ ইতিহাসের জঞ্জাল।'
এস এম ফরহাদ বলেন, 'বামপন্থী দেউলিয়া কিছু ছাত্রসংগঠনের মবের মুখে বিচারিক হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত প্রদর্শনী নিয়ে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সার্বিক শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানায়। আমরা সেই অনুরোধে সম্মান দেখিয়ে প্রদর্শনীর কিছু অংশ সরিয়ে নিতে বাধা দেইনি।'
ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতির অভিযোগ, 'কিছু বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করতে মব তৈরি করেছে, অশালীন আচরণ করেছে। আমাদের বক্তব্যে কিছু মহল—বিশেষ করে শাহবাগ ঘরানার তথাকথিত বামচেতনার লোকেরা—অস্বস্তি বোধ করেছেন।'
তিনি বলেন, '১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও "তথাকথিত বিচার" নামক রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার প্রকল্প আমরা তথ্য-প্রমাণসহ জনসমক্ষে উপস্থাপন করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভুয়া ও পাতানো বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের অপচেষ্টা চালিয়েছে—এটাই ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের মূল বার্তা।'
তিনি আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছর পর যারা ফ্যাসিবাদী বয়ান পুনরুৎপাদন করছে, তারা "৩৬ জুলাই"-এর স্পিরিটের বিরোধিতা করছে। একইসাথে "জনবিচ্ছিন্ন" কিছু বামপন্থী গোষ্ঠীকে গণমাধ্যমে "সাধারণ শিক্ষার্থী" হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা এরও প্রতিবাদ জানাই।'
উল্লেখ্য, গতকাল জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা '৩৬ জুলাই: আমরা থামব না' শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করে।
প্রদর্শনীতে 'বিচারিক হত্যাকাণ্ড' অংশে যে নেতাদের ছবি টানানো হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসাইন সাইদী, আব্দুল কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাশেম আলী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ—যারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিলেন।
প্রদর্শনীর এসব ছবি দেখে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন বামধারার ছাত্রসংগঠন ও একদল সাধারণ শিক্ষার্থী।
পরবর্তীতে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হন। পরবর্তীতে শিবিরের এক নেতার সম্মতিতে প্রক্টরিয়াল টিম ছবিগুলো সরিয়ে ফেলে।
এরপর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করতে থাকে শিবির ও বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।