খুলে দেওয়া হলো কাপ্তাই বাঁধ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ কমাতে খুলে দেওয়া হয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধ। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে বাঁধের সবকটি স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়ের প্রতিটি ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৫টি ইউনিট দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। অর্থাৎ স্পিলওয়ে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন মিলিয়ে প্রতি সেকেন্ডে মোট ৪১ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব পানি শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে।
এদিকে, কয়েকদিন ধরে কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দেয়। যদিও স্পিলওয়ে খোলা বরাবরের মতো স্বাভাবিক ঘটনা, তবে এবার তা নিয়ে জনমনে উত্তেজনা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও কাপ্তাই বাঁধ কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে, সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়, যেকোনো সময় স্পিলওয়ের গেট খুলে পানি ছাড়ার প্রয়োজন হতে পারে। কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
রাতেই জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) এক বার্তায় জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে সোমবার রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্পিলওয়ের গেট খুলে পানি ছেড়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটির বাসিন্দা ও সংগঠক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, "প্রায় প্রতি বছরই হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি গেলে স্পিলওয়ে খুলে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এবারও ৬ ইঞ্চি করে জলকপাট খুলে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি পানি নদীতে যাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বাড়ে। এর ফলে পর্যটনকেন্দ্র ঝুলন্ত সেতু ডুবে যায়, আবার পানি কমলে তা ভেসে ওঠে। যারা নিচু এলাকায় হ্রদ দখল করে অবৈধভাবে বসতি গড়েছেন, তাদের দুর্ভোগ হতে পারে। এটিকে কেউ কেউ 'বন্যা' বলে প্রচার করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পানি মানুষের কাছে আসেনি—মানুষই পানির কাছে গিয়েছে।"