মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করা গণঅভ্যুত্থান বিরোধী কাজ: আনু মুহাম্মদ
যারা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে দেখাতে চায়, তারা গণঅভ্যুত্থানের বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, 'যারা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে দেখাতে চায়, তারা গণঅভ্যুত্থানের বিরোধী। একাত্তর আওয়ামী লীগের একার সম্পত্তি নয়। একে উদ্ধার করে গণমানুষের কাছে আনতে হবে।'
শনিবার (২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত 'দ্রোহযাত্রা' পূর্বক জমায়েতে তিনি এ কথা বলেন।
গত বছরের ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এ বছরও আয়োজন করা হয় 'শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার দ্রোহযাত্রা'। শহীদ মিনার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে এ যাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ ও কাঁটাবন হয়ে শেষ হয় শাহবাগে।
এবারের কর্মসূচিতে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিলোপ, ২০২৪ সালের গণহত্যাসহ পাহাড় ও সমতলের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং নব্য ফ্যাসিবাদ প্রতিহতের দাবি তুলে ধরা হয়।
কর্মসূচির সূচনা হয় দুপুর সাড়ে তিনটায় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও মূকাভিনয়ের মাধ্যমে।
দ্রোহযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, 'গণঅভ্যুত্থান এমন এক সময়, যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের আইন, প্রশাসন ও বাহিনী—সবকিছুই জনগণের সামনে বিকল হয়ে পড়ে। ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ এবং ২০২৪ সালেও আমরা এমন অভ্যুত্থান দেখেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এসব অভ্যুত্থানে জনগণের শক্তি দেখা গেলেও তা স্থায়ী বিজয়ে পরিণত হয়নি। এর পেছনে বিশ্বাসঘাতকতা ও সংগঠিত শক্তি ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতা কাজ করেছে।'
আনু মুহাম্মদ বলেন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে হলে শ্রেণি, ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গ—এই চার ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'ভারতের আধিপত্য থাকলে আদানী চুক্তি, রামপাল প্রকল্প, ট্রানজিট চুক্তি কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? মার্কিনদের সঙ্গে চুক্তি কেন? কেন অস্ত্র ও বোয়িং বিমান কেনা হচ্ছে? এসব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে দ্রোহযাত্রা চালিয়ে যেতে হবে।'
সমাবেশে আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়া মাইকেল চাকমা বলেন, 'শেখ হাসিনার শাসনামলে পাহাড়বাসী হিসেবে আমাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হত্যা, গুম ও মামলার শিকার হতে হয়েছে। এখন সমতলে কিছু পরিবর্তন এলেও আমরা আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা আগের অবস্থানে রয়ে গেছি। এখনও আমাদের সেই আগের দাবি নিয়েই আন্দোলন করতে হচ্ছে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিদ্রা বলেন, 'অভ্যুত্থান নিয়ে কোনো জাতির সাধারণ মানুষের কৃতিত্ব দাবি করতে দেখা যায় না, সেটা রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।'
তিনি বলেন, 'দ্রোহযাত্রা ছিল এমন এক যাত্রা, যেখানে নানা মতাদর্শের মানুষ একত্র হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত গিয়েছিল। এর কৃতিত্ব সবার। আমরা সব নিপীড়ন-অন্যায়ের বিরুদ্ধে একসাথে হয়েই দ্রোহ করেছি।'
