চাঁদাবাজের ‘তালিকা’ ঘিরে রাজশাহীতে আলোড়ন, আছে বিএনপি-জামায়াতের ৫০ নেতাকর্মীর নাম

রাজশাহীতে ১২৩ জন চাঁদাবাজের একটি কথিত তালিকা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন চলছে। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নাম রয়েছে। কারা এটি তৈরি করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তালিকাটি নিয়ে কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চললেও নগরের বোয়ালিয়া থানায় এক চাঁদাবাজির মামলা হওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মামলায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে ১৮ জনের নাম ওই তালিকায়ও রয়েছে। এতে চাঁদাবাজির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।
তালিকায় ব্যক্তি অনুযায়ী থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, রাজনৈতিক পরিচিতি, কিছু ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর, চাঁদা আদায়ের খাত এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না—এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। এতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০টির আওতাধীন এলাকার তথ্য আছে।
তালিকায় বোয়ালিয়া থানার ২২ জন, রাজপাড়া ১৬, চন্দ্রিমা ১৪, মতিহার ৭, শাহ মখদুম ১৬, এয়ারপোর্ট ১৪, পবা ৮, কর্ণহার ১০, দামকুড়া ৮ এবং কাশিয়াডাঙ্গার ৮ জনের নাম রয়েছে। তবে তালিকায় কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক আবাসন ব্যবসায়ী নগরের বোয়ালিয়া থানায় দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে একটি মামলা করেন। এতে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, যাদের মধ্যে ১৮ জনের নাম ওই তালিকায়ও পাওয়া গেছে।
মামলার পর গত ২৬ জুলাই রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা মামলাটিকে 'ষড়যন্ত্রমূলক' আখ্যা দেন। সেখানেই বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা বিএনপির সভাপতি ও মামলার এক আসামি শামছুল হোসেন মিলু দাবি করেন, 'এই তালিকা পুলিশের তৈরি। ওসি সাহেবের স্বাক্ষর আছে। আমার কাছে কপি আছে। ষড়যন্ত্র করে তিনি করেছেন।'
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, 'এই তালিকা করে কেউ বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এই তালিকা সঠিক নয়। আমরা চাই, তালিকাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে যাচাই বাছাই করে দেখা হোক।'
তবে আরএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান বলেন, 'এই তালিকা পুলিশের নয়। পুলিশের তৈরি তালিকা বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য সংস্থাও এ ধরনের তালিকা করে থাকে। এটি কোনো সংস্থার তৈরি কি না, তা নিশ্চিত নয়। পুলিশ বিষয়টি যাচাই করছে। কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তালিকায় নাম থাকা জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিষয়ে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, 'তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ বয়কট করা হয়েছে। নেতাদেরও বলা হয়েছে, তারা যেন কারও কাছে ঘেঁষতে না পারে। তারপরও সুযোগ পেলে তারা কারও পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে প্রচার করে।'
রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সচিব মো. শাহাদাৎ হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, জামায়াতের সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত ছয়জনের মধ্যে বর্তমানে কেবল একজনই দলের কমিটিতে আছেন।
'তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকা উচিত ছিল না। তবুও, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব, এবং যদি কিছু পাওয়া যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,' তিনি বলেন।
জামায়াত নেতা আরও বলেন যে, 'তালিকাভুক্ত আরও দুইজনকে পূর্বে বহিষ্কার করা হয়েছিল, বাকি তিনজন দলের সাথে সম্পর্কিত নন।'
'কেউ জামায়াতের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করলে তার এই সংগঠনে কোনও স্থান নেই। এটি জামায়াত আমীরের স্পষ্ট নির্দেশ,' তিনি বলেন।