এবার ভারতে ইলিশ রপ্তানির কোনো পরিকল্পনা নেই: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

এবার ভারতে ইলিশ রপ্তানির কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, 'এবার ভারতে ইলিশ রপ্তানির কোনো পরিকল্পনা নেই। ভারতেরই পত্রিকার তথ্য হলো এবার গঙ্গায় ইলিশ অনেক বেড়ে গেছে। যেকোনো কারণেই হোক, সাগরের ইলিশ ওদিকে গেছে। কাজেই তাদের আর আমাদের ইলিশের অপেক্ষা করা ঠিক হবে না।'
রবিবার (২৭ জুলাই) সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবন মিলনায়তনে গণবিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত 'জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা অনুষ্ঠান-২০২৫'-এ প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের এখানে যদি ইলিশের সংকট থাকে, তাহলে তাদের ওখানে আমাদের [ইলিশ] পাঠানোর কোনো কারণ নেই। হ্যাঁ গতবার যে কারণে পাঠানো হয়েছে সেটা হলো রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখানো। তবে যদি [ইলিশের] সরবরাহ বেশি থাকে বা সেইরকম পরিস্থিতি হয়, সেটি তখন দেখা যাবে। এখনও পর্যন্ত আমাদের সেরকম কোনো পরিকল্পনা নেই।
বাজারে ইলিশের দাম প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, গত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মা ইলিশ রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। তারপর দেখেছেন যে জাটকা নিধন যেন না হয়, ইলিশ যেন বেড়ে উঠতে পারে. তাই জুনের ১১ তারিখ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরপরেও আমরা প্রতিদিন যা মনিটর করছি, তা হলো বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে ইলিশ সমুদ্র থেকে নদীতে আসতে পারছে না।
তিনি বলেন, সাগরের মাঝে ইলিশ আছে, কিন্তু নদীতে আসতে পারছে না। এখন গতকাল পর্যন্ত খবর পেয়েছি যে এখন নদীতেও মাছ আসছে। তবে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে, বিশেষ করে সাগরে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত আছে বলে, অনেক জেলেরা এখনও মাছ ধরতে যেতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমি বলতে পারি, ইলিশের সরবরাহ বাড়লেই বাজারে দাম কমবে। এবং ইলিশের সরবরাহ বাড়লে যদি দাম না কমে, তাহলে বুঝতে হবে এখানে সিন্ডিকেট কাজ করছে এবং বাজার ব্যবস্থার মধ্যে ত্রুটি আছে। সেটি করার জন্য আমরা বাজারের আড়তদারদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলছি। আমরা বলছি যে এক কেজি ইলিশ যেন কোনো অবস্থাতেই ১৫০০ টাকার উপরে না হয়।
ফরিদা আখতার বলেন, আপনাদেরকে একটা তথ্য দেই, সত্যিকারের ইলিশের স্বাদ হয় ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ইলিশের মধ্যে। সেটির দাম কম হবে এবং সেটির পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি আসছে। একদম বড় ইলিশ যারা খেতে চায়, তারা বেশি দাম দিয়ে খাবে, সেটি অন্য ব্যাপার। তবে আমি খুবই চাচ্ছি যে ইলিশের সরবরাহ বাড়ুক এবং আমাদের দেশে মানুষ খাক।প্রবাসীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র দুটি দেশে আমরা ইলিশ পাঠাচ্ছি সেটা হলো সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
তিনি বলেন, তারা আমাদেরকে রেমিটেন্স দিচ্ছেন, অথচ তারা ইলিশ খেতে পারছেন না। এর জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুমতি দিয়েছি যদি কেউ রপ্তানি করতে চায় ১১ হাজার মেট্রিক টন রপ্তানি করতে পারবে, তবে এর বেশি কেউ রপ্তানি করতে পারবে না।
এ সময় মব সৃষ্টি এবং এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সব সময় চাই শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে। আমরা অহেতুক কারো ওপর লেথাল উইপেন ইউজ করা বা কঠোরভাবে দমন করতে চাই না।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে এটা সামাজিক ব্যাপার। মব সৃষ্টির ব্যাপারে গণমাধ্যম অনেক ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। যেসব কারণে মব সৃষ্টি হয়, সে কারণগুলোকে আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে। আমি মনে করি এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। সরকার এখানে কোনো ধরনের বাড়তি দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী না।
এ সময় ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপন প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, বিগত সময়গুলোতে যেভাবে দেখেছি যে সরকারি এবং ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন তখনও আমাদের পক্ষে কাজ করেছে আন্তর্জাতিকভাবে এবং অনেকগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। এর ফলে কিন্তু ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে ডকুমেন্টেড হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অফিস করতে চাচ্ছে। এর মানে এই না যে এখন আমাদের মানবাধিকারের অবস্থা খারাপ বলে আসতে চাচ্ছে, তা না।
তিনি আরও বলেন, দেশে এরকম একটা অফিস থাকলে যেই আসুক ক্ষমতায়, তারা প্রত্যেকের মধ্যে একটা ব্যাপার থাকবে যে আমরা মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে খুবই সচেতন এবং আমরা সেটি রক্ষা করতে চাই। যেহেতু জাতিসংঘ এই ব্যাপারে সক্রিয়, তারা তাদের অফিস করতে চাচ্ছেন, আমরা তাতে সম্মতি জানিয়েছি।