বরখাস্ত দুদক কর্মকর্তা শরীফকে পুনর্বহালের নির্দেশ হাইকোর্টের

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলোচিত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরি পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পাওনা বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন।
তিনি বলেন, রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা, সব বেনিফিট ও বকেয়া বেতনসহ চাকরিতে পুর্নবহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, তার চাকরিচ্যুতির আদেশকে প্রথম থেকে (ভয়েড অব ইনিশিও ) বাতিল ঘোষণা করেছেন। ধরে নেওয়া হবে তিনি সব সময় চাকরিতে বহাল ছিলেন।
প্রসেঙ্গত, শরীফ উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক ছিলেন। তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন।
২০২২ সালের ১৬ জুন শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ।
এরপর তিনি দুদকে চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে ২০২২ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটে হাইকোর্ট ২০২৪ সালে রুল জারি করেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও তিনি দুদক বরাবর আবেদন দিয়েছিলেন।
চাকরি যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, ১৩০টার মতো মামলা শরীফকে দেওয়া হয়েছিল তদন্ত করার জন্য। এর ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বিষয়ে তদন্ত করেন।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে ৩০ জুন ৬২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই রিপোর্টে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের বিষয় উঠে আসে। এ রিপোর্ট দাখিল করার পর তার ওপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে।
তিনি আরও বলেন, তিনি [শরীফ] অনেক সেনসেশনাল মামলা তদন্ত করেছেন। একটি অন্যতম মামলা ছিল রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি। এরপর তার চাকরি চলে যায়। তার রিপোর্টে যে সব মানুষের নাম এসেছিল তারা শক্তিশালী মানুষ ছিল। তাদের দুর্নীতি ফাঁস করার কারণে...আজ পর্যন্ত সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দুদক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানি না। দুঃখজনক বিষয় বর্তমান দুদকও গত ১১ মাসেও তাকে চাকরিতে পুর্নবহাল করেনি, বলেছে আদালতের রায় আনতে হবে।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় শরীফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, 'তিন বছরের আইনি লড়াই শেষে হাইকোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান না হলে হয়তো এই ন্যায়বিচার পেতাম না। চাকরি হারানোর পর অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেছি। আজ থেকে সব দুঃখ-কষ্ট মুছে গেল। আর কোনো দুঃখ নেই।'