চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশ-বৈষম্যবিরোধীদের সংঘর্ষ, ওসিকে অপসারণের দাবিতে থানার সামনে অবস্থান

চট্টগ্রামের পটিয়ায় থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের চার সদস্যসহ ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অপসারণের দাবিতে আজ বুধবার (২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে স্থানীয় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, গতকাল রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মারধরের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আজ সকাল ১০টা থেকে তারা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে 'পুলিশি হামলার' প্রতিবাদে ও ওসির অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।

বর্তমানে থানার বাইরে মহাসড়কে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করছেন। আর পুলিশ থানার মূল ফটক বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবাইরুল হাসান আরিফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের ৪০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে পুলিশ পিটয়ে আহত করেছে। আমরা ঘটনাস্থলে আছি। এ ঘটনার সুরাহা ছাড়া আমরা রাজপথ ছাড়ব না।'
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে থানায় মব নিয়ে ঢুকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এরপর আর তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তিনি কল ধরেননি।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, 'আমি ছুটিতে ঢাকায় ছিলাম। এ ঘটনার পর ছুটি বাতিল করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।'
জেলা পুলিশের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মো. রাসেলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি
চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সামনে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত জবাবদিহিতা ও বিচারের দাবি জানিয়েছে।
আজ (২ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ১ জুলাই নির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রদের ওপর পুলিশ বিনা উসকানিতে 'অগ্রহণযোগ্য' হামলা চালায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'গতকাল ১ জুলাই ২০২৫, চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সামনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণরত আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, ধাক্কাধাক্কি এবং অপমানজনক আচরণ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার শামিল।'
এতে আরও বলা হয়, 'আমরা এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকে অনৈতিক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে দেখছি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন ও প্রতিবাদ করাটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, আর সেই অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং নিন্দনীয়।'
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সুস্পষ্ট ৪টি দাবি জানিয়েছে:
১. পটিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তার কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
২. আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রশাসনিকভাবে এই হামলার দায় সরকারকে নিতে হবে।
৪. ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্বচ্ছ পুলিশি আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে এবং থানাগুলোতে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চায়, আমরা কোনো ধরনের পুলিশি নিপীড়ন, ছাত্রদমন বা রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতদুষ্টতা মেনে নেব না। রাষ্ট্র যদি নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।'
এতে আরও বলা হয়, 'আমরা দায়িত্বশীলভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব, তবে প্রশাসনিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায়ও থাকব, মাঠেও থাকব, ইতিহাসের পাতাতেও থাকব।'