শাসনব্যবস্থায় ব্যক্তিতান্ত্রিকতা ঠেকাতে ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করা প্রয়োজন: ড. আলী রীয়াজ

শাসনব্যবস্থায় ব্যক্তিতান্ত্রিকতার আশঙ্কা থাকায় ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
আজ রোববার (২৯ জুন) বেলা ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের বৈঠক শুরু হওয়ার আগে তিনি এমনটা বলেন।
আজকের সভায় আলোচনার বিষয়গুলো হচ্ছে—সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা।
আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, কমিশন আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়, বরং আপনাদেরই অংশ। কেবল দায়িত্ব পালন করছে মাত্র। আর মাত্র ১ দিন পরেই জুলাই শুরু হবে। আমাদেরকে অবশ্যই জুলাই মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়ার একটি পরিণতিতে যেতে হবে।
তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে সংবিধান সংশোধনকে অনেকেই ছেলেখেলা মনে করেছে। এজন্য সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে যেন সংবিধান সংশোধন করা না যায়।
তিনি আরও বলেন, 'ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করা প্রয়োজন এই কারণেই যে, শেষ পর্যন্ত শাসনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিতান্ত্রিকতা তৈরি গিয়েছিল। তার আশঙ্কাকে আমরা উড়িয়ে দিতে পারিনা।'
'আজকে আশা করছি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল এর সংশোধনী প্রস্তাব সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি নিয়ে আলোচনা শেষ হবে, একইসাথে উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হবে', যোগ করেন তিনি।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনীর হায়দার জানান, আজকে নতুন কোনো বিষয় আলোচনার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পুরোনো আলোচনার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি না হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
৫৩টি বৈঠকে সিদ্ধান্ত মাত্র দুটি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এখন পর্যন্ত ৫৩টি বৈঠক হলেও মাত্র দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে।
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি হলো—সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল ও আস্থাবিল ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা। তবে এ সিদ্ধান্তেও বিএনপি 'নোট অব ডিসেন্ট' দিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধনী ও জাতীয় নিরাপত্তা (যুদ্ধ পরিস্থিতি) বিষয়ক ভোটও ৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় আনবে।
দ্বিতীয় যে সিদ্ধান্তটি হয়েছে, তা হলো—চারটি স্থায়ী সংসদীয় কমিটির (পাবলিক অ্যাকাউন্টস, প্রিভিলেজ, এস্টিমেট ও আন্ডারটেকিংস) সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দিতে হবে। তবে জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল দাবি করেছে, বিরোধী দলকে আরও বেশি সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক, যাতে সংসদে তাদের অংশগ্রহণ কার্যকর হয়।
এছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন ও নারী আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতিগত ঐকমত্যে পৌঁছানো গেলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও মতভেদ রয়ে গেছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কার নিয়ে অধিকাংশ দল একমত হলেও কয়েকটি দলের আপত্তির কারণে এখানেও এখনও নীতিগত ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি।