নারায়ণগঞ্জে অটোস্ট্যান্ড নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, গ্রেপ্তার ৩

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অটোস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাতে বন্দর রেললাইন ও শাহী মসজিদ এলাকায় পৃথকভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহতরা হলেন বন্দরের হাফেজীবাগ এলাকার চা দোকানি আব্দুল কুদ্দুস (৬০) এবং শাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ও বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২)।
এ ঘটনায় হাফেজীবাগ এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬), আলমচানের ছেলে রবিন (২৬) এবং সেলিম চৌধুরীর ছেলে সোহেল চৌধুরী (২৮)–এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলার ইজিবাইক স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা হান্নান সরকার এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জেরে শুক্রবার ও শনিবার এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, আবুল কাউসার আশা ও হান্নান সরকার একই রাজনৈতিক বলয়ের হলেও তাদের অনুসারীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রনি ও জাফর এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মেহেদী হাসান ও বাবু সিকদার।
শুক্রবারের সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হন। তারই জেরে শনিবার রাত থেকে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিতে থাকে। রাত ১০টার দিকে রনি-জাফর গ্রুপের সদস্য পারভেজের বাবা আব্দুল কুদ্দুসকে সামনে পেয়ে মেহেদী-বাবু গ্রুপের সদস্যরা কুপিয়ে হত্যা করে।
কুদ্দুসকে হত্যার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা লাশ নিয়ে মিছিল বের করে এবং হান্নান সরকারের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাত ১২টার দিকে পাল্টা হামলায় রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন রাস্তা থেকে মেহেদী হাসানকে ধরে সিরাজ উদ দৌলা ক্লাবের সামনে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করে।
নিহত কুদ্দুসের ভাই দুদু মিয়া জানান, 'আমার ভাইকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে পারভেজ কোথায় জিজ্ঞাসা করে। সে বলতে না পারায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।'
মেহেদীর বোনের স্বামী মাহফুজুল হক বলেন, 'রাতে মার্ডারের পর প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তা থেকে মেহেদীকে ধরে ক্লাবে নিয়ে গিয়ে মারধর করে হত্যা করে।'
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, 'এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি হত্যাকাণ্ডে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।'
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা বলেন, 'রনি আর মেহেদী আগে একই গ্রুপে ছিল। আওয়ামী লীগের আমলে একসাথে জেলও খেটেছে। তবে কয়েক মাস ধরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। দুজনেই হান্নান সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। আমার সম্পৃক্ততা নেই।'
হান্নান সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।