জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ, ছাত্রদল-যুবদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

সিলেটের জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের বিক্ষোভের ঘটনায়—ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত রোববার রাতে ও আজ সোমবার সকালে সিলেট ও জাফলং থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার শাহজাহান আহমদ ও ফারুক মিয়া। গ্রেপ্তারকৃতরা এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের গাড়িবহর আটকে বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে বাধা ও অবৈধভাবে অবরোধ করে সরকারী কর্মচারীকে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে, রোববার রাতে গোয়াইনঘাট থানার উপ-পরিদর্শক ওবায়দুল্লাহ বাদী হয়ে রোববার রাতে মামলা করেন। এই মামলায় দেলোয়ার ও শাহজাহানকে সিলেট থেকে এবং ফারুক মিয়াকে জাফলং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার বাদী ও গোয়াইনঘাট থানার উপ-পরিদর্শক ওবায়দুল্লাহ বলেন, "দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরের গতিরোধ করে বিক্ষোভের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা জাফলং পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও বাধার সম্মুখীন হন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ওইদিন দুপুরে তারা জাফলং বাজার এলাকায় জড়ো হয়ে উপদেষ্টাদের রাস্তা আটকে 'ভুয়া ভুয়া' বলে স্লোগান দেয়। এসব বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন রাস্তায় শুয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও বিরূপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
ঘটনার ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিনসহ স্থানীয় কিছু বালু ও পাথর ব্যবসায়ী। এই ঘটনার পর ওই রাতে গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়; আর রোববার আজির উদ্দিনকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে ছাত্রদল।
এদিকে, এ ঘটনায় রোববার রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও প্রায় ১৫০ জনের নাম অজ্ঞাত রেখে মামলা করে পুলিশ। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান, দ্বিতীয় আসামি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। এ ছাড়া মামলায় আরও সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, মামলা দায়েরের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে ১ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে সেনা সদস্যরাও যেতে পারেননি। এরপর থেকে জাফলংয়ে বালু ও পাথর লুটপাট চলছে। পাশাপাশি পাথর কোয়ারি ইজারার দাবিও জানিয়ে আসছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
শনিবার সকালে জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে, এইরকম জায়গায় আমরা আর পাথর উত্তোলনে অনুমতি দিব না। এই জায়গা [জাফলং] পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। আমরা কথা বলেছি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে—এইখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য।'
জাফলং এলাকায় অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও। তিনি বলেন, 'অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে এই এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আপাতত এখান থেকে আর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এখানে যে-সব ক্রাশার মেশিন রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন করা যায়, তাহলে এখান থেকে এমন রাজস্ব আসবে, যা লন্ডন থেকে আসা রেমিট্যান্সকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি পাথর তুলে পরিবেশ ধ্বংস করব, না কি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করব।'