মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহারে হত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ [আনুষ্ঠানিক অভিযোগ] আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।
এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ১৬ জুন ধার্য করা হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানির কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত করা হয়।
এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বিচারিক কার্যক্রমের সরাসরি সম্প্রচার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেইসবুক পেইজেও সরসারি সম্প্রচার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফেইসবুক পেইজেও লিংক শেয়ার করে এ বিচার সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে।
এদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে উপস্থাপন করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চার্জশিটে শেখ হাসিনাকে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত অন্য দুইজন হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে ১২ মে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে আসে। আজ সেই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিক -১ উপস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে গত ২০ মে ট্রাইব্যুনাল এর বিচারকক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে বিচার কার্যক্রম সরাসরি কিংবা ধারণ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা যাবে বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আইনজীবীরা বলছেন, সরাসরি সম্প্রচারে বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। এমন উদ্যোগকে বিচার বিভাগের নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলছেন তারা।
জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন নির্মূলে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
এছাড়াও হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য, আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলছে। আসামিদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তারা কারাগারে রয়েছেন। মামলার ধার্য তারিখে তাদেরকে হাজির করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় চাওয়ার পর আদালত আদেশটি দেন। শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।