জলাবদ্ধতায় অচল সিলেট নগর, ঢলে বন্যার শঙ্কা

অতি বৃষ্টিতে সিলেট নগরের অর্ধশতাধিক এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। শুক্রবার রাত থেকে অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে, তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক।
অবস্থার অবনতি হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। নগরের দ্বিতীয় তলার কক্ষ নম্বর ২০৫-এ স্থাপিত এই কন্ট্রোল রুমের জরুরি দায়িত্বে রয়েছেন সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।
শনিবার (৩১ মে) সিসিকের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় থেকে সরাসরি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একইসঙ্গে প্রতিদিন বিকেল ৫টার মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের অগ্রগতির প্রতিবেদন সিসিকের আইসিটি শাখার ইমেইলে পাঠাতে বলা হয়েছে।
অবিরাম বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলের পানিতে দ্রুত বাড়ছে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, সারিগোয়াইন ও ধলাইসহ সব নদ-নদীর পানি। এতে নগরীর পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী সড়ক-জনপদ প্লাবিত হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী বৃষ্টিতে জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, লালদিঘীরপাড়, তেররতন, মাছিমপুর, তালতলা, শিবগঞ্জ, ছড়ারপাড়সহ অনেক এলাকায় হাঁটুপানি জমে গেছে।
চৌহাট্টা এলাকার বাসিন্দা রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী জাকির আহমদ বলেন, 'একটু ভারী বৃষ্টি হলেই নগরীতে পানি জমে যায়। পানি ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগ চলছে।'
সিসিকের কন্ট্রোল রুম চালুকে 'আইওয়াশ' দাবি করে তিনি বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে হাজার কোটি টাকা খরচ করেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি, বরং দুর্নীতিই হয়েছে।'
বন্যার শঙ্কা
এদিকে সিলেটের পাশাপাশি উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রবল বর্ষণে ঢলের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সেই পানিই দ্রুত নেমে আসছে সিলেটের নদ-নদীতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে দ্রুত। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে জাফলং, বিছনাকান্দি ও সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রগুলো। এসব এলাকায় ভ্রমণ না করতে পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে এখনো কেউ পানিবন্দি হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণে শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ইউএনও রতন কুমার অধিকারী জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশ প্লাবিত হলেও এখনো কোনো গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়নি। সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, শনিবার পানি কিছুটা কমলেও নিম্নাঞ্চলে এখনও পানি রয়েছে। ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে এখনো কেউ আশ্রয় নেয়নি।