জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আপিলের রায় রোববার

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফিরে পেতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের ওপর রায় দেবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামীকাল রোববার (১ জুন) এ রায় ঘোষণা করা হবে।
শনিবার (৩১ মে) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দৈনন্দিন কার্যতালিকায় দেখা গেছে, রোববারের শুরুতেই আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চে এ রায় দেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৪ মে চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১ জুন দিন নির্ধারণ করেন। শুনানিতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং উত্তর মহানগরের আমির সেলিম উদ্দিন।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন।
পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
রিটে তৎকালীন জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়।
২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।
এরপর জামায়াত একাধিকবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এবং দলের নাম 'জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ' থেকে পরিবর্তন করে 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী' রাখে।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক।
সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, নিবন্ধনটি আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। তবে জামায়াতকে আপিল করার অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ৫ আগস্ট জামায়াতের করা স্থগিতাদেশ আবেদন খারিজ করেন।
২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াত আপিল করে।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন।
ওইদিন রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর হয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমান জানান, সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধা এবং অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীনের অনুপস্থিতির কারণে ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছিল।
আইনজীবীরা উপস্থিত না থাকায় আদালত মামলাটি 'ডিসমিস ফর ডিফল্ট' (ডিফল্টের কারণে খারিজ) করেন। তবে মামলাটি পুনরায় শুনানির (রিস্টোর) সুযোগ রাখা হয়, যা আদালতের এখতিয়ার।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার পুনর্নির্বাচিত হয়।
ওই বছরের জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়ে সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেয়। ১ আগস্ট সরকার জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তবে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াত নিষিদ্ধ আদেশ বাতিলের উদ্যোগ নেয়। ২৮ আগস্ট সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
এরপর জামায়াত নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে। ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি পুনরুজ্জীবিত (রিস্টোর) করেন।
এরপর ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুনানি শেষ হয় গত ১৪ মে।