দ্বিতীয় দিনের মতো সেবাদান বন্ধ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে

ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইওএইচ) 'জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের' একটি গ্রুপ এবং হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর টানা দ্বিতীয় দিন সেবাদান বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) নিশ্চিত করেছে, আজ হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল এবং কোনো চিকিৎসক, নার্স বা কর্মী হাসপাতালে উপস্থিত হননি।
সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনের আহত প্রায় ৬০–৬৫ জন রোগী ছাড়া হাসপাতালে আর কোনো রোগী নেই। বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিছু রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
যদিও আন্দোলনকারীরা এখনও হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করছেন, তবে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না, কারণ হাসপাতালে কোনো কর্মী, নার্স বা চিকিৎসক নেই।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বুধবার (২৯ মে) সকালে নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবিতে কর্মীরা প্রতিবাদ করছিলেন। সেই সময় জুলাই আন্দোলনের আহতদের একটি দল কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এই সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী আহত হন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী।
তিনি অভিযোগ করেন, আহতদের একটি দল যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই মারধর করেছে।
তবে জুলাই আন্দোলনের আহতরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা লাঠি ও রড নিয়ে হাসপাতালের আবাসিক ভবনের জানালাগুলো ভাঙচুর করেন। অপারেশন থিয়েটার এবং অ্যানেসথেশিয়া বিভাগেও ভাঙচুর করা হয়।
আশরাফুল আলম নামের হাসপাতালের এক কর্মী টিবিএস-কে বলেন, 'বুধবারের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার কোনো চিকিৎসক, নার্স বা কর্মী হাসপাতালে আসেননি। ফলে হাসপাতালের কোনো কার্যক্রমই চালু নেই।'
তিনি বলেন, 'যারা গত ১১ মাস ধরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন, তাদেরই গতকাল মারধর করা হয়েছে। আমাদের ৭–৮ জন কর্মীর মাথায় আঘাত লেগেছে। তারা রড, লাঠি সব কিছু নিয়ে প্রস্তুত হয়ে এসেছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'নিটোর (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল) থেকেও কিছু লোক এসে যুক্ত হয়েছিল। উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা কাজে ফিরব না।'
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ঘটনার সূত্রপাত: পরিচালকের কক্ষে উত্তেজনা
হাসপাতাল পরিচালক ডা. খায়ের চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার (২৮ মে) থেকেই উত্তেজনা বাড়ছিল। ওইদিন বিকেলে একটি দল তার কক্ষে আসে, যাদের মধ্যে গত রোববার আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজনও ছিলেন।
তিনি বলেন, 'তারা একে অপরকে দোষারোপ করছিলেন দাতাদের দেওয়া অর্থ ভাগ না করার অভিযোগে। একপর্যায়ে একজন জানান, তার কাছে পেট্রোল আছে। আমি দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই। এরপর সেনাবাহিনী আসে এবং তারা চলে যান।'
পরদিন সকালে হাসপাতালের কর্মীরা নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। তখন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় যখন অন্য রোগীদের স্বজনরাও সংঘর্ষে যুক্ত হন।
দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা একজন আন্দোলনকারী হিল্লোল বলেন, 'বুধবার আমরা কেউ নিচে নামিনি। মঙ্গলবার কিছু আহত ব্যক্তি পরিচালকের কক্ষে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তবে বুধবার আমরা কেউ নিচে যাইনি—এর ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।'