‘শপথ পড়িয়ে রায় কার্যকর করুন, না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো’: ইশরাক

সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করে স্থানীয় সরকারকে শপথ পড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন। না হলে নগরবাসিকে সঙ্গে নিয়ে চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আপনারা অবিলম্বে আমাকে শপথ পড়িয়ে রায় কার্যকর করুন। না হলে আগামীকাল থেকে আমরা নগরবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।'
আজ (২৯ মে) নগর ভবনে সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ইশরাক হোসেন এ কথা বলেন।
ইশরাক বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আপনারা জনগনের বিরুদ্ধে যাবেন না। আপনারা একজনের শপথ নিয়ে এতো জটিলতা সৃষ্টি করছেন, আপনারা কিভাবে ৩০০ আসনে এমপি নির্বাচন করে তাদেরকে শপথ পড়াবেন? বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।'
এসময় তিনি বলেন, 'আমাদের আদালতের প্রতি আস্থা ছিলো এবং আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এতে আমাদের আদালতের প্রতি আস্থা বেড়েছে।'
গত দুই সপ্তাহের আন্দোলনে যারা ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, 'অবিলম্বে আসিফ মাহমুদকে পদত্যাগ করতে হবে। কোর্টের রায় অনুযায়ী অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।'
ইশরাক বলেন, 'গেজেটকে বহাল রাখা হয়েছে। আমরা যে শুরু থেকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা, আমার দল বিএনপি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর সাথে আরও প্রমানিত হয়েছে যে, বর্তমান সরকারের কিছু উপদেষ্টা রায় নিয়ে নানা টালবাহানা করেছে।'
সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে 'ঢাকাবাসী'।
টানা ১৪ দিনের মতো ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে নগর ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা আসেন নগর ভবনে। অনেকে ভিজে, কেউবা ছাতা বা তিরপল মাথায় দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই বিক্ষোভে অংশ নেন।
একই দাবিতে আজ সকাল থেকে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। ১৪ মে থেকে ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে, ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেটের কার্যকরিতা স্থগিত চেয়ে এবং শপথ পড়ানো থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, তা স্থগিত চেয়ে রিটকারীর লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ-সংক্রান্ত লিভ টু আপিল আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।
আপিল বিভাগ বলেছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নগর ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে আজকের কর্মসূচি থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগও দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। তারা ইশরাক হোসেনের পক্ষে স্লোগান দেন। 'অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে শপথ দাও', 'শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবে না', 'এক দুই তিন চার, আসিফ তুই গদি ছাড়', 'আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও'-সহ নানা শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় নগর ভবন এলাকা।
দুপুরের দিকে ইশরাক হোসেন নগর ভবনে উপস্থিত হলে আন্দোলনকারীরা তাকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ওয়ারীর হাজী আনোয়ার বলেন, 'আমরা ইশরাককে হাসিনার সঙ্গে লড়াই করে ভোট দিয়েছি। কিন্তু হাসিনা তাকে সেই চেয়ারে বসতে দেয়নি। এখন আদালতের রায় পেয়েও বসতে দিচ্ছে না, নাটক শুরু করেছে। আমরা আন্দোলন করে আমাদের মেয়রকে শপথ পড়াতে বাধ্য করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরব না।'

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ষাটোর্ধ্ব কালাম হাজী ক্ষোভে বলেন, 'এই বৃষ্টিতে ভিজেই আন্দোলনে এসেছি। আর সরকার মশকরা শুরু করেছে। এই তামাশা মানব না। দ্রুত দাবি না মানলে ঢাকা অচল করে দেব।'
শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের এক কর্মচারী মোহন বলেন, 'আমাদের একটাই দাবি—ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। না হলে নগর ভবনের কিছুই নড়বে না। যতক্ষণ আমাদের মেয়র দায়িত্ব না পান, ততক্ষণ আমরা কোনও কার্যক্রমে অংশ নেব না।'
আন্দোলনে 'ঢাকাবাসী'-র সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, 'এই আন্দোলন যৌক্তিক। আমাদের একটাই দাবি—মেয়র ইশরাককে তার প্রাপ্য দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাটক শুরু করেছে, আমরা কোনও নাটকের ধার ধারি না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।'
গত ১৪ মে থেকে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইশরাক সমর্থকরা। একই দাবিতে গত সপ্তাহে দুই দিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনেও অবস্থান করেন তারা।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাককে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন।
গত ২৭ মার্চ ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের অনুলিপি পেয়ে গত ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসির নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
পরবর্তীতে ১৪ মে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। সেইসঙ্গে বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির এই সদস্যকে মেয়র ঘোষণা করা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ। আবেদনকারীর আইনজীবী কাজী আকবর আলী।
গত ২১ মে রিটের শুনানি শেষ হয়। পরদিন রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, রিট আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।