তারেক-জুবাইদার কারাদণ্ড বাতিল হাইকোর্টের

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এ মামলার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সাজা দিয়ে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হয়েছে।
একই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৯ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২৮ মে) ডা. জুবাইদার আপিল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর জুবাইদার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম মাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, 'এই মামলায় তারেক রহমান আপিল করতে পারেননি। কিন্তু এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা ও আরেকটি মানিলন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানকে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খালাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সেসব রায়ের নজিরের ধারাবাহিকতায় এই মামলাতেও তারেক রহমানকে জুবাইদা রহমানের সঙ্গে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করলেন আদালত।'
তিনি বলেন, 'এই মামলায়য় বিচারিক আদালতের বিচার ও রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে, সেটি পুরো বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। বিচারকি আদালতের পুরো রায় বাতিল হওয়ায় তারেক জুবাইদা দুইজনই বেকসুর খালাস পেলেন এই মামলা থেকে।'
তিনি আরও বলেন, 'তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচাকে আদালতে রায় হওয়া আর কোনো মামলা নেই, সব মামলায় তারা খালাস পেলেন।'
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই মামলা দায়ের করে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ছাড়া জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উৎস থেকে অর্জিত ৩৫ লাখ টাকার সম্পদ তাদের বৈধ উৎস থেকে অর্জন প্রমাণে ভিত্তিহীন রেকর্ড ও বক্তব্য উপস্থাপনে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওই বছরের ২৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলার ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। ২৭ জুলাই দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সেদিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২ আগস্ট তারিখ ধার্য করেন।
২০২৩ সালের ২ আগস্ট সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছরের এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তারেক রহমানকে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেছিলেন আদালত। অনাদায়ে তাকে আরও ৩ মাস সাজা ভোগ করার দণ্ড দেওয়া হয়।
অপরদিকে জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লাখ জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে তাকে আরও ১ মাস সাজা ভোগের দণ্ড দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে তারেক-জোবায়দা দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজাসহ নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
রায়ে বলা হয়, তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা কোনো আদালতে আত্মসমর্পণের পর এই রায় কার্যকর হবে।