কারামুক্ত হলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিরত অবস্থায় কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি শাহবাগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন। এছাড়া, আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার রায়ের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে নয়টি অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর এবং ৬ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন।
এরপর আপিলের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। এ রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগে দণ্ড বহাল রাখা হয়, ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর একই বছরের ১৯ জুলাই এ টি এম আজহারুল ইসলাম রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২৩ পৃষ্ঠার একটি আবেদন করেন, যেখানে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। প্রাথমিকভাবে আজহারুলের পক্ষে আবেদনটি করেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও তার জুনিয়র মোহাম্মদ শিশির মনির।
শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ তাকে পূর্ণাঙ্গ আপিলের অনুমতি দেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে সার-সংক্ষেপ জমা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী আপিল প্রস্তুত করা হয়।
গতকাল আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল হয়েছে।