সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজও উত্তাল সচিবালয়, বিজিবি-সোয়াট-র্যাব মোতায়েন

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে জারি করা 'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিক্ষোভে অংশ না নেওয়া অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। 'অবৈধ কালো আইন' মানা হবে না বলে স্লোগান দিতে থাকেন কর্মচারীরা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি আটকানোর জন্য সচিবালয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছ। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে আজ বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াটের পাশাপাশি পাশাপাশি দায়িত্বে আনা হয়েছে বিজিবি সদস্যদের। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব সদস্যও।

এছাড়া নিয়মিত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড ফোর্স ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
সচিবালয়ের বাইরে দুটি আর্মড পার্সনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটে এক ডজন র্যব সদস্য এসে দাঁড়িয়ে পড়েন।
সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে আজ সচিবালয়ে দর্শণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সচিবালয়ের গেটগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদেরও সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের বিপরীতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের দেয়াল ঘেঁষে জুলাই মঞ্চ নামে একটি সংগঠন সচিবালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বাংলাদেশে থাকা দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসর আমলাদের বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিবাদ উৎখাতে যাত্রা' শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
'ফ্যাসিবাদের আমলারা হুঁশিয়ার, সাবধান', 'ফ্যাসিবাদ উৎখাত', 'একটা একটা আমলা ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর', 'আবু সাঈদ, মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ' ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন জুলাই মঞ্চের আয়োজকরা।
এদিকে অধ্যাদেশ বাতিলের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব সংগঠন নিয়ে সোমবার গঠিত 'বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম'-এর কো চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর টিবিএসকে বলেন, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
আজ তিনি এ ফোরামের সভাপতি এ বি এম আবদুস সাত্তার সচিবালয়ে এলেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের সাথে তাদের সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকার যে আইন করেছে সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময়েও এ ধরনের আইন হয়নি।'
আবদুস সাত্তার আরও বলেন, 'আমি এসেছিলাম কেবিনেট, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিবসহ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে, যাতে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু আমাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আমি একজন সাবেক কর্মচারী। এভাবে আমাকে আটকানো বেআইনি বলে মনে করি। কারণ আমি কোনো আন্দোলন করছি না।'
পরে সাত্তার দাবি করেন, অধ্যাদেশটি স্থগিত করতে চায় সরকার, কিন্তু স্থগিত আদেশের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরকার তাদের কী বলেছে, জানতে চাইলে সাত্তার বলেন, 'সরকার এক-দেড় ঘণ্টা আগে বলেছে, তারা এটা স্থগিত করবে। কিন্তু আমরা বলেছি, স্থগিতের আদেশ জারি করতে হবে, তারপর আমরা আমাদের আন্দোলন উঠিয়ে নেব। এই আন্দোলনটা এখন আর সচিবালয়ে নাই, দেশের সকল অধিদপ্তর-পরিদপ্তর, সকল সংস্থা, মাঠ পর্যায়ের ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস পর্যন্ত আজ মাঠে নামবে।'
সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই রোববার সরকারি কর্মচারী আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এর ফলে চার ধরনের অপরাধের জন্য সরকারি কর্মচারীদের শুধু নোটিশ দিয়েই চাকরিচ্যুত করা যাবে। কর্মচারীরা এর প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছেন।