এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নগদ সহায়তা ও ভর্তুকির বিকল্প সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমদানি ও রপ্তানি নীতি এবং জাতীয় শুল্কনীতির মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে তারা নগদ সহায়তা, ভর্তুকি ও রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সুবিধা বন্ধ হলে বিকল্প কৌশল নির্ধারণের আহ্বান জানান।
শনিবার (২৪ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা: এলডিসি পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তা এবং চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক সেমিনারে এসব প্রস্তাব উঠে আসে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর কাঠামোগত সংস্কার খুব ধীরগতির এবং দেশের বিভিন্ন খাতে কার্যকর রোডম্যাপের অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, "ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য তা ব্যবহার করলে দেশ এগোবে না।"
তিনি সাম্প্রতিক সড়ক অবরোধের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ঢাকার রাস্তা বন্ধ থাকলে একদিনে ৫০ লাখ মানুষের আয়ের সমান ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সোচ্চার হতে হবে। এলডিসি উত্তরণের পর এমন পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।"
সেমিনারের বিশেষ অতিথি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "এলডিসি-পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে দ্রুত একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে। এ ক্ষেত্রে মানবসম্পদ, শিল্প এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয় জরুরি।"
এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস চালুর চেষ্টা চলছে। আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড় করতে ইলেকট্রনিক ডেটা এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থা চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইপিবি'র ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বাণিজ্য নীতিমালার সংস্কার, কমপ্লায়েন্স ও বেসরকারি খাতের প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার কাজ করছে।
মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, "আমদানি ও রপ্তানি নীতি এবং জাতীয় শুল্কনীতির মধ্যে সমন্বয় নেই। পাশাপাশি আমদানি শুল্ক কমানো এবং রপ্তানি নীতির সংস্কারের মাধ্যমে এফডিআই আনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।"
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, "চামড়া, ঔষধ, পাট ও কৃষিপণ্যের রপ্তানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ বিষয়ে গবেষণা জরুরি।"
বিকেএমইএ'র সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, "সরকার প্রণোদনা কমানো ও জ্বালানি খরচ বাড়ানোয় বেসরকারি খাত চাপে পড়ছে। এলডিসি উত্তরণের পর উচ্চমানের পণ্যে মনোযোগ দিতে হবে।"
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের জয়েন্ট চিফ মো. মসিউল ইসলাম বলেন, নগদ সহায়তার বিকল্প কৌশল প্রণয়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় ৫টি দেশে বিপণন অফিস স্থাপন প্রয়োজন।
এদিকে ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরও বাংলাদেশের ট্রিপস সুবিধা অন্তত ছয় বছর বজায় রাখতে কার্যকর আলোচনার প্রয়োজন।
ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাহিদ বলেন, কৃত্রিম তন্তু থেকে পোশাক তৈরির বিনিয়োগে সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।