ভারতে রপ্তানি বন্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্লাস্টিক শিল্প: বিপিজিএমইএ সভাপতি

ভারতে পণ্য রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় দেশের প্লাস্টিক শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)-এর সভাপতি শামিম আহমেদ।
তিনি বলেন, "এই অঞ্চলে আমাদের প্লাস্টিক পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি রপ্তানি বাজার ছিল ভারত, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো—যাকে 'সেভেন সিস্টার' বলা হয়। এই অঞ্চলে রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম হতো। ভারতের হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে প্লাস্টিক শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) থেকে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী প্লাস্টিক খেলনা প্রদর্শনী মেলা উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের 'এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস' প্রকল্প যৌথভাবে এ আয়োজন করছে।
ভারতে রপ্তানিতে বাধা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সেভেন সিস্টার্স এলাকায় পণ্য পাঠাতে হলে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে বেশি খরচ হয়। ফলে সেখানে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্য পাঠানো ছিল অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। কিন্তু এখন যদি আমাদের ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে রপ্তানিতে লাভ থাকবে না।"
তবে তিনি জানান, ভারতে পণ্য রপ্তানি নিয়ে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি তারা মেনে নেবেন।
শামিম আহদে আরও জানান, নেপাল ও ভুটানে রপ্তানিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ভারতের সেভেন সিস্টার্স এলাকায় ঠিক কী পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হতো, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেননি।
শামিম আহমেদ বলেন, "এই মেলা হবে পেশাদার ক্রেতা ও খেলনা শিল্পের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং প্ল্যাটফর্ম। পাশাপাশি এটি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ও প্রাসঙ্গিক তথ্য বিনিময়ের সুযোগ করে দেবে।"
তিনি বলেন, "প্লাস্টিক শিল্পের একটি দ্রুত বর্ধনশীল উপ-খাত হচ্ছে খেলনা উৎপাদন। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলে ১৪৭টি খেলনা কারখানা রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই অবস্থিত কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, ইসলামবাগ, চকবাজার, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, ইপিজেড ও ইজেড এলাকায়।"
দেশীয় কারখানাগুলো অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণ করছে, বাকি ২০ শতাংশ চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে খেলনা শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা- যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে এ খাতে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার ৮০ শতাংশ নারী। বর্তমানে খেলনা রপ্তানি আয় ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগামী পাঁচ বছরে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
বছরে ২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলে ২০৩০ সাল নাগাদ রপ্তানি আয় প্রায় ৪৬৬.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি এবং বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম খেলনা রপ্তানিকারক দেশ।
মেলার উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এতে উপস্থিত থাকবেন দেশি-বিদেশি অতিথি, এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা।
বর্তমানে বাংলাদেশের খেলনা রপ্তানি হচ্ছে ভারতের সেভেন সিস্টার্স, নেপাল, ভুটান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে। ভবিষ্যতে ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজারেও প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো শীর্ষে রয়েছে চীন। তারা কাঁচামাল ও ফিনিশড পণ্য—উভয়ই রপ্তানি করে। বাংলাদেশি খেলনার মান ভালো হলেও প্রযুক্তিগতভাবে চীন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের তুলনায় পিছিয়ে, যা একটি চ্যালেঞ্জ।
শিল্প মালিকরা বলছেন, খেলনা শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, বিশ্বমানের প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন, কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা, এবং গার্মেন্টস শিল্পের মতো সুবিধা প্রদান জরুরি।
বর্তমানে দেশেই এক হাজারেরও বেশি ধরনের খেলনা উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে— শিক্ষামূলক খেলনা, প্রাণীর রঙিন মডেল, প্যাডেল কার, ট্রাইসাইকেল, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, বৈদ্যুতিক পুতুল, প্লাস্টিক দোলনা ও দেয়াল। নতুন সংযোজিত খেলনার মধ্যে রয়েছে— কিবোর্ড, গিটার, ড্রামস, মিনি গাড়ি, অস্ত্র ও গোলাবারুদের প্রতিরূপ।
উদ্যোক্তারা বলছেন, খেলনা শিল্পকে আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্সের উপযোগী করতে হলে সরকারকে সহজ শর্তে ঋণ, অবকাঠামোগত সহায়তা এবং কার্যকর নীতিমালার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
তাদের মতে, ভবিষ্যতে পেট্রোকেমিক্যাল, সাইক্লিং, অটোমোবাইল ও ইলেকট্রনিকস শিল্পে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়বে, যা এই খাতের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করবে।
তবে গার্মেন্টস খাতের মতো সুবিধা এখনো প্লাস্টিক খেলনা শিল্প পাচ্ছে না। শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য সহায়ক নীতি ও সরকারি সহায়তা অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।