আলোচিত সাত খুনের ১১ বছর, এখনও রায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায় স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ। এখনও রায় কার্যকর না হওয়ায় হতাশ নিহতদের স্বজনরা। ঘাতক নূর হোসেনের ভয়ে অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকে।
নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে রোজা, বাবার মৃত্যুর এক মাস পর তার জন্ম, সে এখন মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবার আদর না পাওয়া রোজার কাছে বাবা মানে শুধু ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি।
স্বামী হারিয়ে একাই মেয়েকে বড় করছেন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুর। তিনি বলেন, "এখন আর আমাদের খবর রাখে না কেউ। সবাই তাদের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। বছর ঘুরলেই শুধু সাংবাদিকরা আসে। আমরা কীভাবে বেঁচে আছি, সেটা শুধু আমি আর আমার মেয়ে জানি।"
নূপুরের মতো অন্যান্য নিহতদের পরিবারের গল্পও একই রকম। রায় কার্যকর না হওয়ায় তারা ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। স্বজন হারানোর ব্যথার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে প্রায় প্রতিটি পরিবার।
মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, "আওয়ামী লীগ আমলেও রায় কার্যকর হয়নি। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, দ্রুত রায় বাস্তবায়ন করা হোক। এখনও নূর হোসেনের লোকজনের কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।"

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে তাদের মরদেহ।
এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
এরপর আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, "এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি করে রায় কার্যকরের দাবি জানাই।"