অসুস্থতা নিয়ে স্ত্রীর লড়াই-আ.লীগের আমলে রাজনৈতিক পীড়ন নিয়ে আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট ফখরুলের

একটি হৃদয়গ্রাহী ফেসবুক পোস্টে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার স্ত্রীর প্রতি গভীর অনুভূতি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন, এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালীন রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মধ্যে তার স্ত্রীর অসুস্থতার সাথে লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে মেডিকেল চেক-আপের জন্য সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
আজ (১০ এপ্রিল) তার অফিসিয়াল ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, সিঙ্গাপুরে তার স্ত্রীর চিকিৎসকেরা বলেছেন যে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে, তবে ছয় মাস পর তাদের আবার যেতে হবে।
ফখরুল লিখেছেন, '২০২২ সালের ডিসেম্বরে যখন আমার স্ত্রীর অসুখ ধরা পড়ে, আমার পৃথিবীটা যেন এক মুহূর্তে থমকে গিয়েছিল। সে আমাদের পরিবারের মূল ভিত্তি। আমি যত শিগগিরই সম্ভব তার অস্ত্রোপচার করানোর সিদ্ধান্ত নিই।'
এতে বলা হয়, 'তার অস্ত্রোপচারের আগের দিন রাত ৩ টায় আমার বাসা থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী পুলিশ। আমার মেয়ে ঢাকায় ছুটে আসে। আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের সময় আমি কারাগারে ছিলাম। আমার মেয়েরা এবং চিকিৎসক জাহিদ ছাড়া আর কেউ তখন হাসপাতালে ছিলেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও আমার ভাই-বোনেরা ফোনে খোঁজখবর রাখছিলেন।'
তিনি লেখেন, 'অসীম ধৈর্য ও হাসিমুখে সবকিছু সামলেছেন আমার স্ত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জটিল চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৫০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জেরও মোকাবিলা করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আলহামদুলিল্লাহ, আজ (১০ এপ্রিল) সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে। তবে ছয় মাস পর আমাদের আবার যেতে হবে।'
ফখরুল আরও লেখেন, 'আপনাদের দোয়া ও শুভকামনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।'
গত ৬ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যান মির্জা ফখরুল।
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করেছিল বিএনপি।
সমাবেশের আগে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে চেকপয়েন্ট বসায় এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করতে থাকে।
ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলো'র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানের প্রথম চার দিনে ৩ হাজার ৮৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আর কোনো আপডেট জানানো হয়নি।
এই উত্তেজনাকর পরিবেশে ৮ ডিসেম্বর রাতে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের বাসায় আলাদাভাবে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
দুজনকেই মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ডিবি তাদের আটক বা গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি, বরং দাবি করেছে যে তাদের নয়াপল্টনে ৭ ডিসেম্বরের সংঘর্ষ এবং ১০ ডিসেম্বর আসন্ন সমাবেশের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আটকের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে ডিবি।
৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন দু'জনকেই আদালতে তোলা হয়।
আদালত তাদের জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠায়। তাদের কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
৩২ দিন কারাগারে থাকার পর ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাদের জামিন দেওয়া হয়।